ড. মো. আনিসুর রহমান
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জবির শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য কেন প্রয়োজন!   

জবির সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
জবির সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘদিন থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক তথা ভিসি নিয়োগ নিয়ে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনটি অত্যন্ত যৌক্তিক।

স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর, যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে। এখানে প্রায় সাত শতাধিক শিক্ষক রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুন হলেও এখানে যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন তাদের মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষকের রয়েছে ঈর্ষণীয় গবেষণা সাফল্য।

বিশ্ববিদ্যালয়টির নানাবিধ সংকট রয়েছে। ছাত্রদের হল নেই, শিক্ষকদের আবাসন নেই, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। গবেষণা বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি তার নিজস্ব অধ্যাপকের মধ্য থেকে ভিসি পায়নি। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখানে ভিসি হিসেবে অনেকে কাজ করেছেন। তারা ছিলেন প্রশাসক। নিজের ক্ষমতাকে সুসংহত করাই ছিল তাদের প্রধানতম কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে তারা শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে ব্রিটিশদের মতো ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি অবলম্বন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়াউপনিবেশ স্থাপন করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উন্নয়ন কিংবা সফলতা আনতে পারেননি তারা। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জমি একোয়ার করেছেন। বিনিময়ে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল প্রভাবশালী এমপি ও ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কখনো ঘুমায় না। ২৪ ঘণ্টা সচল থাকে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চলে আটটা থেকে চারটা। এখানে কোনো মুক্ত-বুদ্ধি চর্চার সুযোগ নেই। ছাত্রদের হল নেই, ভালো মানের গ্রন্থাগার নেই। একটা বিশ্ববিদ্যালয় ২০ বছরে অবকাঠামোসহ তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে সহকর্মীদের অনেকেরই ব্যক্তিগত গবেষণায় অর্জন অভাবনীয়।

যাইহোক, এবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনটির যৌক্তিকতা নিয়ে কিছু প্রসঙ্গ তুলে ধরতে চাই। আমাদের সহকর্মীদের ভেতর থেকে ভিসি নিয়োগ হলে তিনি জগন্নাথের বাস্তবতা ধারণ করবেন। দিনশেষে তিনি প্রশাসক না হয়ে আমাদের একজন সহকর্মী হয়ে থাকবেন। তিনি ভাববেন তার সহকর্মী ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে। কীভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বৈশ্বিক শিক্ষার মানদণ্ডে উন্নত করা যায়, তা নিয়ে তার সহকর্মীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় সব সমস্যার সমাধান করবেন। তিনি অতিথি হয়ে আসবেন না। তিনি আমাদেরই লোক হবেন, তিনি আমাদের কথাই ভাববেন। এমনটাই মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তারা।

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। এ শিক্ষাব্যবস্থা যদি উপনিবেশিক চিন্তা কাঠামোর, শাসন কাঠামোর প্রয়োগ হয় তাহলে আমাদের মুক্তি নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আর অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চায় না। আশা করি প্রফেসর ইউনূসের সরকার আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বুঝবে, উপলব্ধি করবে ও আমাদের সহকর্মীদের ভেতর থেকে ভিসি নিয়োগ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম উন্নয়নের সব সুযোগ সুবিধা উন্মুচিত করবে।

লেখক : ড. মো. আনিসুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ, নিহত দুই

মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে, অথচ কুকুরদের খাওয়ালেই যত দোষ: শ্রীলেখা

টানা ৬ ঘণ্টা ধরে জবি ভিসি ট্রেজারার প্রক্টরসহ কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ 

৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেবে পাকিস্তান

সাতক্ষীরায় প্রথমবারের মতো মেরুদণ্ডের জটিল অপারেশন সম্পন্ন

ফজলুর রহমানকে নিয়ে ছাত্রশিবিরের বিবৃতি, বিএনপির প্রতি আহ্বান

মিয়ানমারে ঐতিহাসিক রেলসেতু ভেঙে দিল বিদ্রোহীরা

রিল বানাতে গিয়ে স্রোতে ভেসে গেলেন ইউটিউবার

আগামী পাঁচ দিন দেশজুড়ে ভারি বর্ষণের শঙ্কা

নেপালকে হারিয়ে জয়ের পথে ফিরল বাংলাদেশের মেয়েরা

১০

ফ্যামিলি মেডিসিনের পথপ্রদর্শক প্রাভা হেলথের ৮ বছর পূর্তি উদযাপন

১১

কক্সবাজারে বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আইনজীবীসহ নিহত ২

১২

কেজিএফ নয়, আয়ের রেকর্ড তৈরি করেছিল অন্য এক সিনেমা

১৩

ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন না : ধর্ম উপদেষ্টা

১৪

এবার নিজ জেলায় ফজলুর রহমানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

১৫

চাকসুর তফসিল ঘোষণার সময় জানাল প্রশাসন

১৬

ফজলুর রহমানকে নিয়ে ৯৭ সংগঠনের যৌথ বিবৃতি

১৭

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া বিপ্লব হবে অপূর্ণ : ডা. তাহের

১৮

স্মরণসভায় সাংবাদিকরা / গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস করেননি আবদুস শহিদ

১৯

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

২০
X