কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ভারতে মুসলিম স্বার্থবিরোধী ওয়াকফ বিল পাসের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নিন্দা

ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

ভারতে মুসলিম স্বার্থবিরোধী ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস ও বিজেপি সরকারের ধারাবাহিক মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, গত ৩ এপ্রিল ভারতের লোকসভায় পাসকৃত বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা, মালিকানা ও অধিকার হরণে বিজেপি সরকারের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার আরেকটি ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত।

এই আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের দানকৃত মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রের মতো ধর্মীয় সম্পদগুলোতে সরকারি হস্তক্ষেপ ও দখলের পথ তৈরি করা হয়েছে। বিল অনুযায়ী, ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে মুসলিম নয় এমন দুজন সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা ওয়াকফের ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যকে নস্যাৎ করার শামিল।

নেতারা বলেন, ভারতে বর্তমানে ৮ লাখ ৭২ হাজারেরও বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার মধ্যে জমির পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ৫ হাজার হেক্টর (১০ লাখ একর), যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই ওয়াকফ সম্পত্তিগুলো ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলোর ওয়াকফ বোর্ডগুলোর অধীনে থাকে এবং এটি ভারতের শহুরে ভূমির সর্বোচ্চ মালিকানায় অন্যতম।

সামরিক বাহিনী ও রেলওয়ের পর ওয়াকফ বোর্ডগুলোর মালিকানাধীন ভূমির পরিমাণই সর্বাধিক। বিশেষ করে ভারতীয় পার্লামেন্টে নতুন ওয়াকফ আইন সংস্কারের প্রস্তাব সরকারকে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে অবাধ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করবে, যা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি আরেকটি আঘাত। আমরা এ বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ভারতের ইতিহাসে মুসলিমদের প্রতি অবিচারের পরিমাণ অত্যন্ত ভয়াবহ। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর মুসলিমদের এক বিশাল অংশকে হত্যা, নির্যাতন ও শরণার্থী হিসেবে অন্য দেশগুলোতে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৪ সালে শিখ বিদ্রোহ ও ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় সহস্রাধিক নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে মুজাফফরনগর, ২০১৪ সালে পাটনায়, ২০১৯ সালে দিল্লির দাঙ্গাসহ অসংখ্য ঘটনায় মুসলমানদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়।

নেতারা আরও বলেন, ভারতে বর্তমানে প্রায় ২৫ কোটি মুসলমান বসবাস করছেন, যারা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীর ওপর একের পর এক দমনমূলক আইন চাপিয়ে দিয়ে এবং তাদের ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ভারতের শাসকগোষ্ঠী দেশটিকে একক হিন্দু রাষ্ট্রে রূপান্তরের হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগে ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC)-এর মতো মুসলিমবিরোধী আইন পাস করে মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করার চেষ্টা করা হয়।

এছাড়াও হিজাব ও গরু জবাই নিষিদ্ধ করে মুসলমানদের জীবিকা ধ্বংস এবং প্রকাশ্যে কোরআন অবমাননার ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে। এই সব পদক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিম জনজীবনকে আরও সংকুচিত এবং কঠিন করা হচ্ছে।

নেতারা বলেন, ভারতের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান অতুলনীয় ও চির স্মরণীয়। ভারতের অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে যা পৃথিবীজুড়ে পরিচিত, সেগুলো মুসলিম শাসকদের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতের তাজমহল, লাল কেল্লা, কুতুব মিনার, হাজারদুয়ারী, গোলগম্বুজ প্রভৃতি স্থাপত্যের নিদর্শন মুসলিম শাসকদের হাতেই গড়া। সেসঙ্গে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নির্মাণও মুসলিম শাসকদের অবদান, যা আজকের দিনে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ও বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রাণবন্ত করেছে। ভারতের প্রথম মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, স্যাটেলাইট স্থাপন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা- সবই মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানরা ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, ভারত একটি বহু-ধর্মীয়, বহু-জাতিগত রাষ্ট্র এবং সেখানে কোনো একক ধর্মের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের সংকীর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দেশের প্রতিটি জনগণের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। অতএব, ভারতের মুসলিমদের সব অধিকার সুরক্ষিত রাখা এবং তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তোলার আবেদন জানাচ্ছি।

অবিলম্বে মুসলিম ও মানবতাবিরোধী সব আইন বাতিল করে মানবিক মর্যাদা ও অধিকার পুনঃস্থাপন করতে হবে। আমরা মুসলিম স্বার্থবিরোধী এই বিতর্কিত আইন বাতিল করে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ভারত সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রোহিঙ্গা শিক্ষার জন্য নতুন কাঠামোর আহ্বান আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের

কেন ক্যাটরিনাকে ভুলতে পারছেন না অক্ষয়?

জকসু নির্বাচন ২২ ডিসেম্বর

পরিচয় মিলেছে নিহত ৫ জনের

একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা ৫ ব্যাংকের পর্ষদ বিলুপ্ত

অস্ত্র উদ্ধারে ৫ লাখ, গুলি জমা দিলে ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা

ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে সরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালনের আহ্বান জামায়াতের

আ.লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা 

কাঠগড়ায় বসার টুল চেয়েও পেলেন না নাসার নজরুল, চেহারায় হতাশা 

১০

দাসদের খাবার থেকে রাজকীয় রান্নায়, কতটা উপকারী এই ছোট্ট সাদা কোয়া?

১১

সমালোচনার পর যে বার্তা দিলেন সর্ব মিত্র চাকমা

১২

বিএনপির কাছে ২০ আসন ও মন্ত্রিত্ব চায় এনসিপি

১৩

বিশ্বের প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে যে ইতিহাস গড়ল মালদ্বীপ

১৪

কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি খতমে নবুওয়ত পরিষদের

১৫

পদত্যাগ করে নির্বাচন করার ঘোষণা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের

১৬

যে আসনে লড়বেন জোনায়েদ সাকি

১৭

শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা নিয়ে মাউশির জরুরি নির্দেশনা

১৮

কবে অবসর নেবেন, প্রশ্নের উত্তরে যা জানালেন রোনালদো

১৯

গাজীপুরে ঝুট গুদামে আগুন, ২ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে

২০
X