কদিন আগে ছিল অনিশ্চিত জীবন। গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে দেখা দেয় জীবন ফিরে পাওয়ার নতুন আশা। এক রায়ে বদলে যায় জীবনের মোড়। গত ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পান এটিএম আজহারুল ইসলাম।
মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই মগবাজারে দলের কার্যালয়ে বসছেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। সেখানে আলাদা কক্ষ রয়েছে তার। তবে এখনো দলীয় কোনো পদ বা দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করা হয়নি তাকে। তবে কারাবন্দি থেকেও তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ছিলেন। মুক্তি পেয়ে অংশ নেন সর্বশেষ শূরা সদস্যের বৈঠকে।
এর মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে জামায়াতে দলীয় পদ পাচ্ছেন এটিএম আজহারুল। গুঞ্জনে এমনটা শোনা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে বড় পদে আসতে পারেন তিনি। এছাড়াও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা করবেন তিনি। সবকিছু ঠিক থাকলে রংপুর-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
জামায়াতে নতুন পদ পাওয়ার বিষয়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমে বলেন, তিনি (এটিএম আজহারুল ইসলাম) কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য হিসেবে এখন পর্যন্ত আছেন। নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে বসবেন। আগামী সপ্তাহে হয়তো নতুন পদে তার নাম ঘোষণা আসতে পারে।
এ বিষয়ে জামায়াতের দায়িত্বশীল একটি সূত্র গণমাধ্যমে বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম জামায়াতের অনেক সিনিয়র নেতা। তিনি দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দলীয় ফোরামের সিদ্ধান্তে তিনি বড় পদে আসবেন। দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আগামী সপ্তাহে (ঈদের পর) দলীয় নতুন পদ ঘোষণা করা হবে।
সূত্র আরও বলেন, আপাতত এটিএম আজহারুল ইসলাম নায়েবে আমির হচ্ছেন। বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান তিন বছর (২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫) মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তার মেয়াদ রয়েছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সময়ে আমির পদে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মেয়াদ থেকে গঠনতন্ত্র অনুসারে আগামী মেয়াদে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে আসতে হবে।
এর আগে, ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারামুক্তি পেয়েছেন জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। ২৭ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত এ রায় দেন। এই রায়ের ফলে জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে দুই নম্বর, তিন নম্বর এবং চার নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম।
এ ছাড়া পাঁচ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর ও ছয় নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
সূত্র : যুগান্তর
মন্তব্য করুন