গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন দলটির সাবেক আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া। একইভাবে রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন নুর।
পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে ভাঙনের মুখে পড়েছে দলটি। এরই মধ্যে রেজা কিবরিয়ার পরিবর্তে মো. রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে দলটি।
সোমবার (১৯ জুন) রাতে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘দলের মধ্যে টাকা-পয়সার হিসাব চাওয়া নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। নুর প্রবাসে কমিটি গঠনের ব্যাপারে নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে অনুমোদন দিয়েছেন। অথচ দলের প্রধান হিসেবে আমাকে ওই পদ দেওয়ার কথা। দলীয় ফান্ডের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। কাউকে হিসাবনিকাশ দিতে চান না তিনি। আমি দলের প্রধান, কিন্তু আমাকেও হিসাবনিকাশ দেন না। এখন আমি হিসাব চাওয়াতে তিনি আজেবাজে কথা বলছেন। দ্বিতীয়ত, ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে তিনি যে বৈঠক করেছেন; এটি কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই।’
তিনি বলেন, ‘কী কারণে, কেন ওই বৈঠক করলেন এবং বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন কেন? ইসরাইলের সঙ্গে আমাদের কী সম্পর্ক? তারা কি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে যাবে? নাকি ভিপি নুর টাকা পেয়েছেন? অবশ্য যারা তাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেছেন তারা জানিয়েছেন, বৈঠকের পর ‘কালো একটি ব্যাগ’ নিয়ে তিনি গাড়িতে উঠেছেন। টাকা-পয়সা নিয়ে তিনি কী করেছেন? নিজের স্বাক্ষরে কেন করেছেন–জানি না। আবার ভারতসহ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকের সঙ্গেও গোপন বৈঠক করেন নুর। অথচ দলের আহ্বায়ক হিসেবে আমি তা জানি না। এসব কারণে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে।’
রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘ভিপি নুর এখন বড় নেতা হয়ে গেছেন! রাজনীতি বেশি বোঝেন! আমি তার কথায় চলি না—এসব কারণে সংকটের সমাধান হবে না। আমি আইএমএফের বড় চাকরি ছেড়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। সারা জীবন হালাল টাকা-পয়সা রোজগার করেছি। এখন আমার দলের মধ্যে কেন আর্থিক অস্বচ্ছতা থাকবে—এটা তো মেনে নিতে পারি না।’
জাতীয় ইনসাফ কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিয়ে নুরের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারবিরোধী যে কোনো দল ও সংগঠনের আন্দোলন কর্মসূচিতে আমি অতীতে ছিলাম এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমি ইনসাফ কমিটির কোনো পদ-পদবিতে নেই। সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত—যে ডাকবে, আমি সেখানে যাব।’
রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘ভিপি নুর মিথ্যা কথা বলছেন। অর্থ লেনদেন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলছেন। নুরের নেতৃত্বে দলের ছোট একটি অংশ এসব বলতে পারে। দলের বড় অংশ আমার সঙ্গে রয়েছে। দলের অনেক নেতাই দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন, দলের মধ্যে যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকে, তাহলে কীভাবে আমরা প্রমাণ করব–আওয়ামী লীগের চেয়ে আমাদের দল ভালো কিছু করবে?’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমার বিচার-বিবেচনার সঙ্গে তো নুরের বিচারবোধ এক হতে পারে না। আমার বয়স, অভিজ্ঞতা তার চেয়ে বেশি। তিনি যে লেভেলে বড় হয়েছেন, সেই লেভেলেই চিন্তা করবেন। এটিই স্বাভাবিক। আমি বাংলাদেশে এসেছি দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য; রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে। আমি তো নুরের মতো পরিবার থেকে আসিনি। তার কাছ থেকে আমার শেখারও কিছু নেই। তবে এখন আমার অনুমতি ছাড়া কোনো বৈঠক হবে না, আমি চিঠি ইস্যু করেছি। নুর দলকে অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।’
মন্তব্য করুন