বিএনপির ৮ শতাধিক নেতাকর্মীকে গত ২১ দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (৯ জুন) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তি, কোলের বাচ্চা, বিদেশে অবস্থানকারী মানুষ, কারাবন্দি লোককে নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ইত্যাদি গায়েবি অভিযোগে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে তোলা হয়েছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউই এই গায়েবি মামলা ও সরকারি নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রেহাই পায়নি।
রিজভী বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার (৮ জুন) জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে হয়রানিমূলক মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ তার এই কথায় প্রমাণিত হলো যে, গত ১৫ বছর ধরে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিএনপি নেতাকর্মীসহ বিরোধী মত ও সরকারের রোষানলে পড়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে মামলা সম্পূর্ণভাবে ডাহা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক। যার উদ্দেশ্য- শারীরিক ও মানসিকভাবে নিপীড়ন করা। শুধু ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্যই রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, হামলা, অত্যাচার, উৎপীড়ন, খুন, গুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসন চালিয়ে আসছে অবৈধ সরকার। একদলীয় দুঃশাসনের অভিশাপ পুরুষানুক্রমে বহন করে আসছে বর্তমান অবৈধ সরকার।
তিনি বলেন, জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা ধরে রেখে অবৈধ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী গত ১৫ বছরে দেড় লাখ হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানসহ প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খালেদা জিয়াকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে তাতে তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই সরকারের আমলে বিচারের রায় ছিল ফরমায়েশি ও আক্রোশমূলক। এখন তার বিরুদ্ধে একটি মামলায় দিনে নয় রাতেও কোর্ট বসানো হচ্ছে- যা বিশ্বের ইতিহাসে নজীরবিহীন। গণতন্ত্র-ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনের অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এখনো কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছে, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের, পাইকারিহারে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নির্যাতন চালিয়ে দেশটাকে নরকে পরিণত করেছে আওয়ামী নিপীড়ক সরকার।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা দলদাস আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা এবং কমপক্ষে ১২০৪ জনকে গুম করেছে। ১২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গুরুতর জখম ও চিরতরে পঙ্গু করা হয়েছে। ছয় বছরের শিশু থেকে মায়ের পেটের বাচ্চাকেও গুলি করা হয়েছে। আজ এতদিন পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের স্বীকারোক্তিতে দালিলিক সত্যতা নিশ্চিত হলো যে, আইন আদালত, পুলিশসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন- সব গিলে খেয়েছে নিশিরাতের সরকার।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জনবিচ্ছিন্ন ভোটারবিহীন ব্যর্থ সরকার উদ্ভ্রান্ত বেপরোয়া হয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখলেই তা ছিন্নভিন্ন করার জন্য হামলে পড়ছে শেখ হাসিনার দমন বাহিনী। নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, গ্রেপ্তার, দমন-নিপীড়ন-সাঁড়াশি আক্রমণ করছে। অসহনীয় লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক দুর্নীতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিদ্যুৎ অফিসের সামনে বিএনপির অবস্থান ও বিক্ষোভ মিছিলে বর্বরোচিত কায়দায় হামলা করেছে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। পাবনা, ফেনী, ফরিদপুর, ঢাকা, পটুয়াখালী, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলায় হামলা করা হয়েছে।
রিজভী আরও জানান, বৃহস্পতিবার সারা দেশে সব জেলা শহরের বিদ্যুৎ অফিসে অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে ৩২ জনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলতি বছরের গত ১৯ মে থেকে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে মোট ১৭১টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮০২ জনের অধিক এবং মোট আসামি প্রায় ৬৯১৫ এর অধিক নেতাকর্মী। এ ছাড়াও আহত হয়েছে অসংখ্য নেতাকর্মী।
মন্তব্য করুন