বনি ইসরাঈলরা জান্নাতি খাবার ‘মান্না-সালওয়ার’ পরিবর্তে যেসব খাবার চেয়েছিল, তার একটি ছিল পেঁয়াজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমরা বলেছিলে, হে মুসা! আমরা এ ধরনের খাদ্যে কখনো ধৈর্য ধারণ করব না। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করো। তিনি যেন ভূমিজাত দ্রব্য শাকসবজি, কাঁকুড়, গম, মসুর ও পেঁয়াজ আমাদের জন্য উৎপাদন করেন।’
‘মুসা বললেন, তোমরা কি উৎকৃষ্টতর বস্তুকে নিকৃষ্টতর বস্তুর সঙ্গে বদল করতে চাও? তবে কোনো নগরে অবতরণ করো। তোমরা যা চাও, নিশ্চয়ই তা সেখানে আছে। তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্র্যগ্রস্ত হলো এবং তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটি এ জন্য যে তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমা লঙ্ঘন করার জন্যই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা : ৬১)
ওই আয়াতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পেঁয়াজকে নিকৃষ্টতর বলার অর্থ হলো, জান্নাতের মান্না-সালওয়ার তুলনায় দুনিয়ার এসব খাবার একেবারেই নিকৃষ্ট। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের আশপাশে অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, ‘কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া হারাম।’ আবার অনেকে দাবি করেন, ‘কাঁচা রসুন খেলে গুরুতর পাপ হয়।’
চলুন জেনে নিই, কাঁচা পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া হারাম কি না—
যা বলা হয়েছে হাদিসে
হজরত কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এ দুটি গাছ (পেঁয়াজ ও রসুন) সম্পর্কে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ দুটি জিনিস খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদে না আসে। যদি কোনো কারণবশত তোমাদের তা খেতে হয়, তবে তোমরা তা রান্না করে দুর্গন্ধ দূর করে খাবে।’ (আবু দাউদ: ৩৭৮৪)
খিয়ার ইবনে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আয়েশাকে (রা.) তিনি পেঁয়াজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) সর্বশেষ যে খাদ্য গ্রহণ করেন, তাতে পেঁয়াজমিশ্রিত ছিল।’ অর্থাৎ রান্না করা পেঁয়াজ। (আবু দাউদ : ৩৭৮৬)
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.)-এর সামনে রসুন ও পেঁয়াজ সম্পর্কে আলোচনা হয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, এ দুটির মধ্যে রসুনের ঝাঁজ বেশি, আপনি কি একে হারাম মনে করেন?’ তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা তা খাবে, কিন্তু যে ব্যক্তি তা খাবে, এর দুর্গন্ধ দূর না হওয়া পর্যন্ত সে যেন মসজিদে না আসে।’ (আবু দাউদ : ৩৭৮০)
অন্য এক হাদিসে এসেছে, মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, একদিন আমি রসুন খাওয়ার পর মসজিদে যাই, যেখানে রাসুল (সা.) সালাত আদায় করতেন। এ সময় এক রাকাত নামাজ চলে যায়। যখনই আমি মসজিদে প্রবেশ করি, তখন রাসুল (সা.) রসুনের গন্ধ পান। তিনি নামাজ শেষে বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ গাছ (পেঁয়াজ-রসুন) খাবে, সে যেন ততক্ষণ আমাদের কাছে না আসে, যতক্ষণ দুর্গন্ধ দূর হয়ে না যায়।’ (আবু দাউদ : ৩৭৮৩)
যা বলছেন ফুক্বাহায়ে কেরাম
উল্লিখিত হাদিসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলছেন, কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া যাবে। প্রয়োজন শুধু খাওয়ার পর ভালো করে মুখের দুর্গন্ধটা দূর করা। ‘দুর্গন্ধ’তো দূর করারই বিষয়, তা আমার মুখে থাকবে কেন? সুতরাং কাঁচা পেঁয়াজ খেলে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করব, দুর্গন্ধ দূর করব, যাতে অন্যের কষ্ট না হয়। (আল কাউসার)
মন্তব্য করুন