ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি রোজা। মুসলিমদের মতো পূর্ববর্তী জাতিগোষ্ঠীর ওপর রোজা ফরজ ছিল। তবে প্রথমেই ইসলামী শরিয়তে রমজানের রোজা ফরজ হয়নি; বরং তা কয়েক ধাপে হয়েছে।
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় রোজা ফরজ হওয়ার ধারাক্রমটি বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসেও সেই বর্ণনা পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতির মতো পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ওপরও রোজা ফরজ করেছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
ইসলাম আগমনের আগে আরব সমাজেও রোজার প্রচলন ছিল। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জাহেলি যুগে কুরাইশরা আশুরার রোজা পালন করত এবং আল্লাহর রাসুল (সা.)-ও এই রোজা পালন করতেন। যখন তিনি মদিনায় আগমন করেন তখনো এই রোজা পালন করেন এবং তা পালনের নির্দেশ দেন। যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তখন আশুরার রোজা ছেড়ে দেওয়া হলো। যার ইচ্ছা সে পালন করবে আর যার ইচ্ছা পালন করবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০০২)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন মদিনায় আসেন তখন দেখতে পেলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তাদের রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনেই আল্লাহ তাআলা ফিরাউনের সঙ্গে যুদ্ধে মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে বিজয় দিয়েছিলেন। তাই আমরা ওই দিনের সম্মানে রোজা পালন করি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা (আ.)-এর বেশি নিকটবর্তী। এরপর তিনি সাওম পালনের নির্দেশ দিলেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৪৩)
দ্বিতীয় হিজরিতে রমজানের রোজা ফরজ হয়। ইমাম নববী (রহ.) লেখেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মোট ৯ বছর রমজানের রোজা রেখেছেন। কেননা তা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ হয়। আর নবী (সা.) একাদশ হিজরির রবিউল আউয়ালে ইন্তেকাল করেন।’ (আল-মাজমুআ : ৬/২৫০)
রমজানের রোজা যখন প্রথম ফরজ হয়, তখন মুমিনদের রোজা রাখা ও ফিদিয়া দেওয়ার ইচ্ছাধিকার দেওয়া হয়।
ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য ফরজ করা হয়েছে। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে। এটা যাদের অনেক কষ্ট দেয় তারা এর পরিবর্তে ফিদিয়া (একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা)। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)
এরপর রোজা ফরজ করা হয় কোনো প্রকার অবকাশ না রেখে। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস। এতে মানুষের দিশারি এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। তোমাদের মধ্যে কেউ পীড়িত হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
তাফসিরে ইবনে কাসিরে উল্লেখ করা হয়েছে, রমজানের রোজা যখন ফরজ হয়, তখন রাতের বেলা এশার নামাজ বা ঘুমের আগ পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগের অনুমতি ছিল। এশার নামাজ বা ঘুমের পর পানাহার ও স্ত্রী-সম্ভোগ নিষিদ্ধ হয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আল্লাহ সময় সংক্ষিপ্ত করে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজার সময় নির্ধারণ করেন।
শরিয়ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইসলামের শুরুতে মুসলমানদেরকে রোজা ও ফিদিয়া এর যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে তারা স্বাধীন ছিলেন। যেমন মাআজ ইবনে জাবাল রা. বলেন, প্রথম দিকে যার ইচ্ছা রাখত, যার ইচ্ছা না রেখে মিসকিনকে খাদ্য দান করত; কিন্তু পরে এই সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরে নাজিল হয় রমজানে রোজা রাখার অপরিহার্য বিধান— রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
মন্তব্য করুন