‘আদব’ সম্পর্কে প্রথমে কিছু মৌলিক কথা।
‘আদব’ অর্থ উৎকৃষ্ট রীতিনীতি ও উত্তম পদ্ধতি ইত্যাদি। ইবাদত-বন্দেগী থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল কাজ-কর্ম, লেনদেন, সামাজিকতা, আচার-ব্যবহার এবং মন ও মানুষের পরিশুদ্ধি ইত্যাদি সকল বিষয়ে রাসূলে কারীম (সা.) যে রীতি ও নীতি নিজে অবলম্বন করেছেন এবং উম্মতকে তা অনুসরণ করতে বলেছেন তারই নাম হল আদব।
ইসলামে আদবের (তা যে কোনো বিভাগেরই হোক না কেন) স্থান অনেক উর্ধ্বে। এগুলো কোনো অনর্থক বা অতিরিক্ত জিনিসের মতো নয়; বরং তা ইসলামের যাবতীয় হুকুম আহকামের মৌলিক উদ্দেশ্যেরই অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রোজার ব্যাপারে যে সমস্ত ফযীলত, বরকত ও পুস্কারের ওয়াদা রয়েছে, তা পেতে হলে এবং কাঙ্খিত লক্ষ্য তথা আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য্য, তাকওয়া ও খোদাভীতি অর্জন করতে হলে শুধু পানাহার ও স্ত্রীসম্ভোগ ত্যাগ করাই যথেষ্ট নয়। কারণ, এগুলো হচ্ছে রোজার দেহ-কাঠামো। আর তার রূহ হল তার আদবসমূহ। তাই রোজার আদবসমূহের ব্যাপারে যত্নবান না হলে রোজার ফযীলত ও বরকতসমূহ অর্জিত হবে না।
দৃষ্টিকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে হেফাযত করা। যেমন বেগানা মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে, টিভি-সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকা।
জবানের হেফাযত করা। অর্থাৎ মিথ্যা, গীবত-পরনিন্দা, অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে - ‘যে ব্যক্তি রোজা অবস্থায় মিথ্যাচারিতা ও মন্দ কাজ করা পরিত্যাগ করেনি তার পানাহার পরিত্যাগের কোনো গুরুত্বই আল্লাহর কাছে নেই। আল্লাহ তাআলা তার পানাহার ত্যাগ করার কোনোই পরোয়া করেন না। -সহীহ বুখারী হাদীস ১৯০৩
‘রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন কোনো অশ্লীল কিংবা মন্দ কথা না বলে। যেন কোনো প্রকার শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। যদি অন্য কেউ তাকে গালিগালাজ করে কিংবা মারধোর করে তবে সে যেন (তদ্রূপ আচরণ বা গালির প্রতিউত্তর গালি না দিয়ে) শুধু এতটুকু জানিয়ে দেয় যে, আমি রোজাদার। -সহীহ বুখারী হাদীস ১৯০৪
এতে প্রতীয়মান হয় যে, রোজা অবস্থায় মারধর ঝগড়াঝাটি তো দূরের কথা, শোরগোল করাও রোজার আদব পরিপন্থী। অতএব জবানকে এসব থেকে বিরত রেখে সর্বদা যিকির-আযকার ও কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে তরতাজা রাখবে। অন্তত চুপ থাকলেও রোজার বরকত বিনষ্ট হওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
কানকে সর্বপ্রকার গুনাহের কাজ থেকে হেফাযত করা। যেমন গানবাদ্য, গীবত, পরনিন্দা ও অশ্লীল কথাবার্তা শোনা থেকে দূরে থাকা।
এ ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন হাত ও পা ইত্যাদিকে গুনাহ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখা।
সাহরী ও ইফতারে হারাম আহার পরিহার করা। ইমাম গাজ্জালী রাহ. বলেন, যে ব্যক্তি সারাদিন রোজা রেখে হারাম মাল দ্বারা ইফতার করল, সে যেন একটি অট্টালিকা নির্মাণ করল এবং একটি শহর ধুলিস্যাত করে দিল।
যথাসম্ভব পানাহারে সংযমী হওয়া। কারণ ইফতার ও সাহরীতে প্রয়োজন অপেক্ষা কিছু কম খাওয়ার দ্বারাও রোজা শক্তিশালী হয় এবং পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। কারণ, অধিক পানাহারে অনেক সময় মানুষের কুপ্রবৃত্তিগুলো শক্তিশালী হয় এবং তাকে নানাবিধ পাপকার্যে লিপ্ত হতে উদ্বুদ্ধ করে। ইফতার ও সাহরীতে কম খাওয়ার দ্বারা কুপ্রবৃত্তিগুলো প্রশমিত হয়।
রোজা অবস্থায় আল্লাহ তাআলার আযমত ও বড়ত্বের কথা এবং তাঁর হুকুম আহকাম বেশি বেশি স্মরণ রাখা। রোজাদারের অন্তরে এ চিন্তা জাগরত থাকা উচিত যে, আল্লাহ তাআলা হাযির নাযির আছেন। আমি তাঁর হুকুমে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পানাহার ত্যাগ করেছি। তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাকে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকতে হবে।
এভাবে এক মাস রোজা রাখা সম্ভব হলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাকওয়া ও সংযমের মহামূল্য সম্পদ দান করবেন, যার মাধ্যমে ইহকালীন ও পরকালীন প্রভূত কল্যাণের দ্বার উন্মুক্ত হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য করুন