পৃথিবীতে জন্মের পর মৃত্যু অবধারিত। প্রতিটি প্রাণির জন্য মৃত্যু অবধারিত ও ধ্রুব সত্য।
পৃথিবীতে কোনো শিশুর জন্মের পূর্বে দিনক্ষণের বিষয়ে ধারণা থাকলেও, কবে মৃত্যু হবে তার ধারণা কারও কাছে নেই। পৃথিবীতে আমরা কেউ স্থায়ী নই।
প্রতিটি মানুষ নির্ধারিত সময়ে দুনিয়াকে বিদায় জানাতে হয়। চিরঞ্জীব ও চিরন্তন কেবল মহান আল্লাহ।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কেয়ামতের দিন তোমাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।
তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। (সুরা আল ইমরান : ১৮৫)
আল্লাহতাআলা আরও বলেন, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো, তবুও। (সুরা আন নিসা : ৭৮)
মহানবী (স.) মৃতদের মাগফিরাতের জন্য জীবিতদের কিছু দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।
নিজের আত্মীয়স্বজন, আপনজন কিংবা কাছের ও পরিচিত যে কারও মৃত্যু হতে পারে। আর এসব অবস্থায় মানুষের মন ভারাক্রান্ত থাকে।
বিচ্ছেদ-কষ্টে ব্যথাতুর হয় মন। তাদের জন্য উত্তম ও কল্যাণকর কিছু করার প্রবল ইচ্ছা জন্ম নেয় মনে। তাদের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত করতে খুব ইচ্ছে হয়।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহর হজরত ইব্রাহিম (আ.) -এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, হে আমার প্রতিপালক, যেদিন হিসাব প্রতিষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতা ও সব ইমানদারকে ক্ষমা করুন। (সুরা ইব্রাহিম : ৪১)
অন্য জায়গায় হজরত নূহ (আ.) -এর দোয়া বর্ণিত হয়েছে, হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার পিতা-মাতাকেও এবং যে ইমান অবস্থায় আমার ঘরে প্রবেশ করেছে আর সমস্ত মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকেও। (সুরা নুহ : ২৮)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, যখন মানুষ মারা যায় তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ৩টি আমলের ফায়দা ভোগ করে সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান- যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং ওই সুসন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। (সহীহ মুসলিম : ১৬৩১)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) যেভাবে দোয়া করতেন, তার কয়েকটি এখানে দোয়া উল্লেখ করা হলো- (কবরস্থ ব্যক্তির জন্য দোয়া)
اللهُـمِّ اغْفِـرْ لَهُ وَارْحَمْـه، وَعافِهِ وَاعْفُ عَنْـه ، وَأَكْـرِمْ نُزُلَـه ، وَوَسِّـعْ مُدْخَـلَه ، وَاغْسِلْـهُ بِالْمـاءِ وَالثَّـلْجِ وَالْبَـرَدْ ، وَنَقِّـهِ مِنَ الْخطـايا كَما نَـقّيْتَ الـثَّوْبُ الأَبْيَـضُ مِنَ الدَّنَـسْ ، وَأَبْـدِلْهُ داراً خَـيْراً مِنْ دارِه ، وَأَهْلاً خَـيْراً مِنْ أَهْلِـه ، وَزَوْجَـاً خَـيْراً مِنْ زَوْجِه، وَأَدْخِـلْهُ الْجَـنَّة ، وَأَعِـذْهُ مِنْ عَذابِ القَـبْر وَعَذابِ النّـار
উচ্চারণ : আল্লাহহুম্মাগ ফিরলাহু ওয়ারহামহু, ওয়া আফিহি ওয়া ফু আনহু; ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মাদখালাহু; ওয়াগসিলহু বিল মায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি, ওয়ানাক্কিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা ইউননাককাস সাওবুল আব ইয়াযু মিনাদদানাসি; ওয়াবদিলহু দা-রান খায়রান মিন দারিহি, ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি; ওয়া যাওজান খাইরান মিন যাওজিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা, ওয়া আইজহু মিন আযাবিল কাবরি ওয়ামিন আজাবিন নার।
অর্থ : হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে দয়া করুন। শান্তিতে রাখুন এবং তার থাকার স্থানটিকে মর্যাদাশীল করুন। তার কবর প্রশস্থ করে দিন। বরফ ও তুষারের শুভ্রতা দিয়ে, তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিচ্ছন্ন করে দিন যেমন ময়লা থেকে সাদা কাপড় পরিষ্কার হয়।
তাকে দুনিয়ার বাসস্থানের চেয়ে উত্তম বাসস্থান, পরিবার ও সঙ্গী দান করুন, হে মাবুদ, তাকে জান্নাতে দাখিল করুন, তাকে কবর আর দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সহিহ মুসলিম : ২/৬৩৪)
اللَّهُمَّ إِنَّ فُلاَنَ بْنَ فُلاَنٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ، وَعَذَابِ النَّارِ، وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرَّحيمُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলা-নিন ফি জিম্মাতিকা, ওয়া হাবলি জিওয়ারিকা, ফাক্বিহি মিন ফিতনাতিল ক্বাবরি ওয়া আজা-বিন না-রি, ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফাই ওয়াল হাক্ক, ফাগফির লাহু ওয়ারহামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ : হে আল্লাহ, অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারিতে, আপনার প্রতিবেশীত্বের নিরাপত্তায়; সুতরাং আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা থেকে এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
আর আপনি প্রতিশ্রুতি পূর্ণকারী এবং প্রকৃত সত্যের অধিকারী। অতএব, আপনি তাকে ক্ষমা করুন এবং তার ওপর দয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
اللَّهُمَّ عَبْدُكَ وَابْنُ أَمَتِكَ احْتَاجَ إِلَى رَحْمَتِكَ، وَأَنْتَ غَنِيٌّ عَنْ عَذَابِهِ، إِنْ كَانَ مُحْسِناً فَزِدْ فِي حَسَنَاتِهِ، وَإِنْ كَانَ مُسِيئاً فَتَجَاوَزْ عَنْهُ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা আবদুকা, ওয়াবনু আমাতিকা, এহতাজা ইলা রাহমাতিকা, ওয়া আনতা গানিয়্যুন আন আজ-বিহি, ইন কা-না মুহসিনান ফাজিদ ফি হাসানা-তিহি, ওয়া ইনকা-না মুসিআন ফা তাজা-ওয়ায আনহু।
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনার এক দাস, আর এক দাসীর পুত্র, আপনার অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী, আপনি তাকে শাস্তি দেওয়া থেকে অমুখাপেক্ষী।
যদি সে নেককার বান্দা হয়, তবে তার সওয়াব আরও বাড়িয়ে দিন, আর যদি বদকার বান্দা হয়, তবে তার অপরাধকর্ম এড়িয়ে যান।
আল্লাহ রাসুল (সা.) -এর সাহাবি আওফ বিন ইবন মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে মৃত ব্যক্তির জন্য এমন দোয়া করতে দেখে আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম যে, যদি সেই মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম।
রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করে এভাবে দোয়া করতেন বলে হাদিসে এসেছে—
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
উচ্চারণ : আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম; আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসারি।
অর্থ : হে কবরস্থানের বাসিন্দাগণ, তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার প্রতি আল্লাহ রহম করুন।
আমরাও আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব/আপনাদের সঙ্গে মিলিত হব। (সহিহ মুসলিম : ৯৭৪; মিশকাত : ১৭৬৭)।
মন্তব্য করুন