আপনি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে একবার হলেও দেখেছেন? কোনো না কোনো বন্ধুর দেওয়া এমন পোস্ট আপনার চোখে পড়েছে, যেখানে লেখা, ‘আমি এই মর্মে ঘোষণা করছি, আমি ফেসবুক বা মেটাকে আমার কোনো ছবি ব্যবহারের অনুমতি দিইনি।’
কয়েক দিন ধরেই এমন পোস্টে সয়লাব ফেসবুক ওয়াল। যদিও এবারই প্রথম নয়, এর আগেও এমন পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এই ধরনের পোস্ট কতটা সত্য বা কার্যকরী? অথবা কোথা থেকে এলো এই পোস্ট?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে ভাইরাল হয়েছে এই পোস্ট। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে মাঝেমধ্যেই এমন ‘ঘোষণা’ ভাইরাল হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা মনে করেন যে এই ধরনের পোস্ট করলে তাদের কনটেন্ট বা প্রাইভেসি আরও সুরক্ষিত থাকবে।
এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মাহবুব হোসেন ফয়সাল বলেন, এই ধরনের ঘোষণার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। ফেসবুক/ইনস্টাগ্রামে যুক্ত হওয়ার সময় আপনি তাদের ‘টার্মস অব সার্ভিস’। সেখানেই উল্লেখ করা থাকে তারা আপনার কনটেন্ট কীভাবে ব্যবহার করতে পারে।
কীভাবে এল এই পোস্ট
ফেসবুকে এ ধরনের তথ্য কয়েক বছর ধরেই ঘুরে-ফিরে আসছে। যার সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জুড়ে দেওয়া হয় মেটার মালিকানাধীন ফেসবুকের ‘নতুন প্রাইভেসি নীতি’র কথা। মূলত এটি বিভ্রান্তিকর তথ্য, এগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।
এসব পোস্টে যা লেখা থাকে
এগুলো সাধারণত এমন বাক্যে লেখা হয়, ‘আমি এই মর্মে ঘোষণা করছি, আমি মেটা/ফেসবুক/ইনস্টাগ্রামকে আমার ছবি, ভিডিও বা পোস্ট ব্যবহার করার কোনো অনুমতি দিইনি। এই ঘোষণার দ্বারা আমি আমার কনটেন্টের মালিকানা বজায় রাখছি।’
এটা কতটা কার্যকরী
এ ধরনের ঘোষণার কোনো কার্যকারিতা নেই। ফেসবুক/ইনস্টাগ্রামে যুক্ত হওয়ার সময় আপনি তাদের ‘টার্মস অব সার্ভিস’ মেনে নেন। সেখানেই উল্লেখ করা থাকে তারা আপনার কনটেন্ট কীভাবে ব্যবহার করতে পারে। এমনকি ফেসবুক যদি তাদের নীতিমালায় কোনো পরির্বতন আনে, সেটিও ‘টার্মস অব সার্ভিস’-এ যুক্ত করা হয়। এ ছাড়া বড় কোনো ধরনের পরিবর্তন এলে সেটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আপনাকে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানাবে। এর সঙ্গে ভাইরাল কোনো পোস্ট শেয়ার করার সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে পোস্ট করা যেকোনো কনটেন্টের মালিকানা আপনার। ‘টার্মস অব সার্ভিস’ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি মেটাকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, সেটি ফেসবুকে দেখানো বা শেয়ার করার জন্য। আপনি যদি চান কনটেন্ট ডিলিট করে সেই অনুমতি বাতিল করতে পারেন।
এই পোস্ট শেয়ার করলে কী হয়
এই ধরনের পোস্টে শুধু বিভ্রান্তিই ছড়ায়। এতে কারও কোনো প্রাইভেসি রক্ষা হয় না, বরং এটি দেখে অন্যরাও ভুল তথ্য বিশ্বাস করে শেয়ার করতে থাকে।
করণীয় কী
যদি আপনি আপনার তথ্য নিরাপদ রাখতে চান, তাহলে সঠিক প্রাইভেসি সেটিংস ব্যবহার করুন এবং ভুল তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনি আপনার প্রাইভেসি সুরক্ষায় ফেসবুকের সেটিংসে গিয়ে প্রাইভেসি অ্যান্ড সেটিংস এবং প্রোফাইল অ্যান্ড ট্যাগিং অপশন চেক করুন।
কাদের আপনি আপনার পোস্ট দেখতে দিতে চান, তা নিয়ন্ত্রণ করুন (ফ্রেন্ডস, অনলি মি, পাবলিক ইত্যাদি)।
চাইলে আপনার ফটো-ট্যাগ বা ফেস রিকগনিশন সম্পর্কিত অনুমতিও পরিবর্তন করতে পারেন।
সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, ফেসবুকে একাউন্ট খোলার সময়ই ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস’ না পড়ে একাউন্ট খুলে ফেলে অনেকে। সেখানে ‘অ্যাগ্রি’তে মার্ক করে। সেখানে পরিষ্কারভাবে তারা কী কী অ্যাকসেস করতে পারবে, কী কী পারবে না, সবকিছু বলা আছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সাধারণ ব্যবহারকারী এসব পড়েই একাউন্ট খুলে এখন ফেসবুকজুড়ে স্প্যাম পোস্ট দিয়ে বেড়াচ্ছে ‘এই মর্মে’ হেনতেন লিখে। অথচ এই গুজব পোস্টটি প্রতি বছর একবার করে ছড়ায় সবাই। সমালোচনা করা শুরু করলে এবং ভুয়া হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু করলেই থামে।
তবু মস্তিষ্ক খাটিয়ে চিন্তা করে না কোনো অ্যাপ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া অথবা যেকোনো ডিজিটাল জিনিস ব্যবহার করার সময়ই সেই কোম্পানি একটি সম্মতি নিয়ে নেয়। যা হোক এসব ভুয়া পোস্ট কেউ দেবেন না। অযথা টাইমলাইন অপরিষ্কার করবেন না। যারা এসব করে বেড়াচ্ছে, তাদের একটু বোঝানোর পরামর্শ দেন এই বিশ্লেষক।
মন্তব্য করুন