

ইউরোপে ক্রিকেট এখন আর শুধু সহযোগী দেশের সীমিত প্রতিযোগিতায় আটকে নেই। মাঠ, ক্যালেন্ডার ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনায় বড়সড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে মহাদেশটির ক্রিকেট সামনে এগোতে চাইছে এক নতুন গতিতে। সেই লক্ষ্যেই ২০২৬ সাল থেকে চালু হতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি—একটি আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি আসর, যা ইউরোপীয় ক্রিকেটের পরিচিত চিত্রটাই বদলে দিতে পারে।
ইউরোপিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন (ECA) নিশ্চিত করেছে, ২০২৬ সালে শুরু হবে এই নতুন টি–টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল (T20I) প্রতিযোগিতা। এতে অংশ নেবে ইসিএ–র সদস্য দেশগুলোর জাতীয় ক্লাব চ্যাম্পিয়ন দল। ইউরোপের ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে এটি হবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বহুজাতিক ক্লাবভিত্তিক আয়োজন।
গত সপ্তাহে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ইসিএ–র বার্ষিক কংগ্রেসে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ১৩টি সদস্য ফেডারেশনের অংশগ্রহণে কোরাম নিশ্চিত হওয়ার পর নির্বাচন, প্রতিযোগিতা পরিকল্পনা ও কাঠামোগত সংস্কারসহ পূর্ণ এজেন্ডায় আলোচনা হয়, যার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিল নতুন এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
ইসিএ জানিয়েছে, প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য সদস্য দেশগুলোকে ২০২৬ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে আয়োজক দেশ চূড়ান্ত করা হবে। সংগঠনটির লক্ষ্য, এই টুর্নামেন্টকে ইউরোপীয় ক্রিকেটের একটি নিয়মিত ও মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্টে পরিণত করা।
এতেই থামছে না ইসিএ–র পরিকল্পনা। বৈশ্বিক ক্রিকেটে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা টি–১০ ফরম্যাট নিয়েও ভাবছে সংস্থাটি। ২০২৬ সাল থেকে ইউরোপে টি–১০ প্রতিযোগিতা আয়োজনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হবে, যার মূল উদ্দেশ্য সদস্য বোর্ডগুলোর বাণিজ্যিক সক্ষমতা আরও শক্তিশালী করা। এ বিষয়ে মার্কেটিং ও প্রতিযোগিতা কমিশনের সুপারিশ প্রথম প্রান্তিকের নির্বাহী কমিটির সভায় পর্যালোচনা করা হবে।
ইস্তাম্বুলের কংগ্রেসে নেতৃত্বেও এসেছে পরিবর্তন। রোমানিয়ার গ্যাব্রিয়েল মারিন নতুন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। নরওয়ের ইউসুফ গিলানি হয়েছেন প্রথম সহসভাপতি। পাশাপাশি সহসভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রান্সের গুরুমূর্তি পালানি, অস্ট্রিয়ার মোহাম্মদ বিলাল জালমানি এবং মাল্টার ইন্দিকা থিলান পেরেরা। নতুন প্রতিনিধি যুক্ত হওয়ায় বোর্ড এখন পূর্ণ ১১ সদস্যের কাঠামো পেয়েছে।
নবনির্বাচিত সভাপতি মারিন জানিয়েছেন, আগামী চার বছরের জন্য ইসিএ–র অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামো এখন শক্ত ভিত্তি পেয়েছে। পাশাপাশি পুরুষ, নারী ও অনূর্ধ্ব–১৯ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপগুলো আরও শক্তিশালী করাও সংগঠনটির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।
ইউরোপীয় ক্রিকেটের এই সাহসী পদক্ষেপ নতুন দিগন্ত খুলে দেবে কি না, তার উত্তর দেবে সময়। তবে ২০২৬ সাল যে এই মহাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় খুলতে যাচ্ছে, তা এখনই স্পষ্ট।
মন্তব্য করুন