কম বেশি আমরা সবাই হাই তুলি। এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। ক্লান্ত হলে, বিরক্ত লাগলে বা মনোযোগ কমে গেলে হাই তোলাটা একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। কিন্তু যদি আপনি সারাদিন বারবার হাই তুলতেই থাকেন, তাহলে এটা কেবল ক্লান্তি না। বরং এটি আপনার ঘুমের সমস্যার একটি লক্ষণও হতে পারে।
আজকের এ লেখায় আমরা জানবো, হাই তোলা আসলে কী, কেন হয় এবং এটা কীভাবে ঘুমের সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
হাই তোলার কারণ কী?
হাই তোলা এক ধরনের স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। যখন আমরা গভীরভাবে শ্বাস নিই, মুখটা বড় করে হাঁ করে নিই, তারপর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়ি- এটাকেই মূলত হাই তোলা বলে।
হাই ওঠার থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ। ক্লান্তি, মনোযোগের ঘাটতি, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া বা শরীরের নিজেকে নিজে ফ্রেশ রাখার চেষ্টা- অনেক কারণেই হাই উঠতে পারে। সামান্য হাই ওঠা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সারাদিন ঘন ঘন হাই উঠলে সেটা চিন্তার বিষয় হতে পারে।
ঘন ঘন হাই ওঠা ও ঘুমের সমস্যা
১. স্লিপ অ্যাপনিয়া (ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া)
অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন। ঘুমানোর সময় তাদের শ্বাস মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গভীর ঘুম হয় না। পাশাপাশি, এই রোগ চিকিৎসা না করলে হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
লক্ষণ: # জোরে নাক ডাকা # ঘুমের মাঝে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া # সারাদিন ঝিম ধরা বা ঘন ঘন হাই ওঠা
২. অনিদ্রা বা ইনসোমনিয়া
ঘুম আসতে দেরি হওয়া বা ঘন ঘন ঘুম ভেঙে গেলে শরীর ঠিকমতো বিশ্রাম পায় না। ফলে সারাদিন মাথা ঝিমঝিম করে আর হাই উঠতে থাকে।
৩. নারকোলেপসি
এ রোগ থাকলে হঠাৎ করে ঘুম চলে আসে। এটি একটি স্নায়ুবিক সমস্যা। যারা এতে ভোগেন, তারা দিনে অনেকবার হাই তোলেন এবং সারাদিনই দুর্বল বোধ করেন।
৪. রেস্টলেস লেগস সিনড্রোম
এই সমস্যায় রাতে পা কাঁপতে থাকে বা অস্বস্তি হয়, যার ফলে ঘুম ঠিকমতো হয় না। ফলস্বরূপ দিনে বারবার হাই ওঠে।
অন্য কারণও হতে পারে
সব সময় ঘুমের সমস্যার কারণেই হাই ওঠে না। অন্য কিছু কারণও থাকতে পারে :
# উদ্বেগ বা মানসিক চাপ # কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া # বিষণ্নতা বা হতাশা # স্নায়ুর অসুখ (যেমন- পারকিনসন, মাইগ্রেন)
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
নিচের লক্ষণগুলো থাকলে আপনার উচিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। চিকিৎসক প্রয়োজনে ঘুমের টেস্ট বা পরামর্শ দিতে পারেন।
# সারাদিন ঘন ঘন হাই উঠছে # ঘুম ভালো হলেও ক্লান্ত লাগছে # কাজের মধ্যে মনোযোগ থাকছে না # ঘুমের সময় নাক ডাকা, শ্বাস আটকে যাওয়া
ঘুম ভালো রাখার কিছু টিপস
# প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার ও উঠার চেষ্টা করুন # রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মোবাইল বা টিভি কম দেখুন # ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন বা চা-কফি খাবেন না # শোবার ঘরের পরিবেশ ঘুমের সময় শান্ত ও অন্ধকার রাখুন # নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন
কিছু মজার তথ্য
# কিছু প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল, এমনকি মাছও হাই তোলে! # অন্যকে হাই তুলতে দেখলে আমাদেরও হাই ওঠে- একে বলে সংক্রামক হাই! # গর্ভবতী মায়ের পেটেও বাচ্চারা হাই তোলে। এটা প্রমাণিত হয়েছে আল্ট্রাসাউন্ডে! # বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, হাই কেন হয়। তবে অনেকেই মনে করেন, এটা মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে।
হাই তোলা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি বারবার হাই ওঠে, তাহলে সেটাকে ছোট করে দেখবেন না। এটা ঘুমের সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। আপনি যদি সারাদিন ক্লান্ত থাকেন, মনোযোগ কমে যায়, বারবার হাই তোলেন- তাহলে ঘুমের দিকে মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। ভালো ঘুম মানেই ভালো স্বাস্থ্য। তাই হাই উঠলে শুধু মুখ ঢেকে রাখবেন না, বরং বুঝে নিন- শরীর বলতে চাইছে যে ঘুম দরকার।
মন্তব্য করুন