সিঙ্গাপুরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এখন একটি ‘গুরুতর’ সাইবার হামলার মুখে পড়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) দেশটির স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক সমন্বয় মন্ত্রী কে শানমুগম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এমন হামলা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি তৈরি করতে পারে।
শানমুগম বলেন, ‘এই হামলাটি অত্যন্ত জটিল, এটি এখনো চলমান এবং আমাদের বিশ্লেষণে এটি ‘ইউএনসি৩৮৮৬’ নামের একটি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, এ গ্রুপের প্রকৃত পৃষ্ঠপোষক কে, তা সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও, গুগলের মালিকানাধীন সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘ম্যান্ডিয়্যান্ট’ আগে থেকেই UNC3886-কে চীন-সংশ্লিষ্ট একটি সাইবার গুপ্তচরবৃত্তির দল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
মন্ত্রী জানান, এই হ্যাকার গ্রুপ এখনো সিঙ্গাপুরের ‘ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এ হামলার প্রতিকারে সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা (সিএসএ) এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
শানমুগম বলেন, এ ধরনের হামলা সাধারণত ‘অ্যাডভান্সড পারসিস্টেন্ট থ্রেট’ বা এপিটি হিসেবে পরিচিত। এগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত, প্রযুক্তিসম্পন্ন এবং অনেক সময় রাষ্ট্রীয় সহায়তায় পরিচালিত হয়। তাদের লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি এবং জরুরি পরিষেবা যেমন : বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, টেলিকম ও পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত করা।
তিনি আরও বলেন, যদি এই হামলা সফল হয়, তবে তা শুধু তথ্য চুরিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং জাতীয় নিরাপত্তা, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ সিস্টেমে হামলা হলে হাসপাতাল, গণপরিবহন, বিমানবন্দর ও ব্যাংকিং খাত অচল হয়ে পড়তে পারে, যার ফলে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হবে বলে সতর্ক করেন তিনি।
শানমুগম জানান, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরে সন্দেহভাজন এপিটি হামলার সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে একটি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলায় প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার রোগীর ওষুধ সংক্রান্ত তথ্য চুরি হয়, যাদের মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংও ছিলেন।
এই পরিস্থিতি প্রসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা ‘টেনএবল’-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক সাতনাম নারাং বলেন, এপিটি হামলাকারীরা এখন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর টার্গেট করছে যা ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকির ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ছায়ায় ঢাকা প্রতিপক্ষকে ঠেকানো দিন দিন আরও কঠিন হয়ে উঠছে। কারণ যেসব সুরক্ষা কাঠামো দিয়ে প্রতিরোধ গড়া হয়, সেগুলোও এখন অনেক বেশি জটিল ও বিস্তৃত।
এই হামলা সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পরিকাঠামোর ঝুঁকি নিয়ে বৈশ্বিকভাবে আরও সতর্কতা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স
মন্তব্য করুন