আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ জাতিসংঘ অনুমোদিত স্বায়ত্তশাসিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যাদের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন দেশের মুদ্রামানের হ্রাস-বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করা। প্রতিষ্ঠাকালে ২৯টি দেশ চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল। এর সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি শহরে অবস্থিত। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮৯টি রাষ্ট্র এই সংস্থার কার্যক্রমের আওতাভুক্ত।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ধারণা প্রথম সূচিত হয় ১৯৪৪ সালের ২২ জুলাই। এর কার্যক্রমের গোড়াপত্তন ব্রেটন উডস সম্মেলনে (পূর্ববর্তী জাতিসংঘের অর্থ ও আর্থিক সম্মেলনে) মিলিত হয়ে ৪৫টি সদস্য রাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং তাদের আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্য নিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনীতির দেশের সঙ্গে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতও যোগ দেয়। ভারতের তরফে প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রথম ভারতীয় গভর্নর চিন্তামন দ্বারকানাথ দেশমুখ ও ভারতের প্রথম অর্থমন্ত্রী রামসাময় কান্দসামি শানমুখাম চেট্টি।
১৯৪৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ২৯টি রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থাকে স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাখার লক্ষ্য নিয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্থাপিত হয়। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়-বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা আনয়নই এই সংস্থার মূল লক্ষ্য।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি ‘বোর্ড অব গভর্নর্স’ রয়েছে যা এই সংস্থার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক পর্ষদ। একজন মূল গভর্নর এবং প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের জন্য একজন করে পর্যায়ক্রমিক গভর্নর নিয়ে এই বোর্ড অব গভর্নর্স গঠিত। সদস্য দেশগুলো স্ব-স্ব গভর্নর নিযুক্ত করে। ২০১৪ সালের মার্চের শেষদিকে আইএমএফ ক্রিমিয়া বিপ্লবের পর ইউক্রেনের অস্থায়ী সরকারের জন্য ১৮ বিলিয়ন ডলার সংকটকালীন তহবিল ঘোষণা করে।
আইএমএফ বোর্ড ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য আরএসএফ তহবিল অনুমোদন করে। ২০২২ সালের পহেলা মে থেকে তহবিলটি কার্যকর হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ‘রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফান্ড’ (আরএসএফ) থেকে ঋণ গ্রহণকারী এশিয়ার প্রথম দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আইএমএফের এই ঋণ গ্রহণকারী বিশ্বের প্রথম দেশ হচ্ছে বার্বাডোস, এর পরের স্থানেই আছে কোস্টারিকা ও রুয়ান্ডা। তবে আরএসএফ থেকে ঋণ পাওয়ার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
আইএমএফ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করার জন্য নীতিমালা প্রদান এবং সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এর কারণ হলো যে ব্যক্তিগত আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারগুলো ত্রুটিপূর্ণভাবে কাজ করে এবং অনেক দেশে আর্থিক বাজারগুলোতে সীমিত প্রবেশাধিকার থাকে। এ ধরনের বাজার অসম্পূর্ণতা এবং ভারসাম্যপূর্ণ পারিশ্রমিক অর্থনীতি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সংস্থাটি সরকারি অর্থায়নের ন্যায্যতা প্রদান করে। প্রতিষ্ঠানটি বিকল্প অর্থায়নের জোগান দেয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির তিনটি প্রধান কাজের একটি ছিল- বিভিন্ন দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় মূল্য তত্ত্বাবধান করা, যার মাধ্যমে দেশগুলো তাদের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্রিস্তালিনা জর্জিয়েভা।
মন্তব্য করুন