দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এরইমধ্যে সফরের প্রথম দিন শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যায় পাকিস্তান দূতাবাসে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সংকট ও যুদ্ধের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসে। এ সময় নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানের অতীত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান গত ১৫-২০ বছর ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে উন্নতির চেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প তুলনামূলক কম খরচে উৎপাদন করতে সক্ষম। তাই এ খাতে দুই দেশের মধ্যে বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও এতদিন তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম এবং প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সে প্রেক্ষাপট নিয়েও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সার্ক বর্তমানে ভারতের কারণে অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে। কীভাবে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা যায় এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনা সম্ভব- সেটিও বৈঠকে আলোচিত হয়েছে।
নাসীরুদ্দীনের মতে, পাকিস্তান যেহেতু একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তাই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়েই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।
এদিন সন্ধ্যা ৬টায় পাকিস্তান হাইকমিশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসহাক দার। বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সমসাময়িক আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। বৈঠক শেষে বিএনপি নেতারা নৈশভোজে যোগ দেন।
এর আগে বিকেলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। বৈঠকে জামায়াতের নেতৃত্ব দেন দলের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাহের জানান, আলোচনা হয়েছে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বিষয় ও বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে। পাশাপাশি সার্ককে সক্রিয় করার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল একপেশে। আমাদের বিশ্বাস, সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। সে বিষয়েই বৈঠকে দুই পক্ষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে। আমরা বলেছি, আজ বিশ্বে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যু, সেসব বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সফরের দ্বিতীয় দিন আগামীকাল রোববার (২৪ আগস্ট) সকালে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। পরে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা বিলোপ চুক্তি।
মন্তব্য করুন