আহাম্মদ উল্লাহ সিকদার
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:০০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার, মৃত্যু ছাড়া নেই মুক্তি

এল সালভাদরের সিকট বন্দিশালা। ছবি : সংগৃহীত
এল সালভাদরের সিকট বন্দিশালা। ছবি : সংগৃহীত

দূর-দূরান্তেও নেই কোনো মানববসতি। ঠিক এমনই একটি স্থানে ৪১০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে কারাগার। কঠোর নিরাপত্তায় ঘেরা এই কারাগারে রয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা দেয়াল। সেই কারাগারে যেতে আবার লাগে বিশেষ অনুমতি। এমনকি ভয়ংকর এই কারাবন্দিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সহস্রাধিক সদস্য। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগারের খেতাবপ্রাপ্ত এই বন্দিশালার নাম সেন্টার ফর দ্য কনফাইনমেন্ট অব টেরোরিজম বা সিকট।

মধ্য আমেরিকার ছোট দেশ এল সালভাদর। ১৯৮০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল দেশটি। তখন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষুধা আর দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে অনেকেই পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে গিয়ে নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবা সালভাদেরিয়ানরা অপরাধী চক্র গড়ে তোলে। পরে তাদের ধরে ধরে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়।

দেশে ফেরা সেই অপরাধীরাই এক সময় এল সালভাদরের ত্রাস হয়ে ওঠে। এরপর খুনোখুনির জন্য বিশ্বজুড়ে বদনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশটির। কিন্তু গেল কয়েক বছরে এল সালভাদরে অপরাধের মাত্রা ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এল সালভাদরে যে গ্যাং কালচার চালু ছিল তা দমাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ২০২৩ সালে সিকট চালু করেন। নিয়ম করেন ভয়ংকর এই কারাগারে একবার ঢুকলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কেউ বের হতে পারবে না।

রাজধানী সান সালভাদর থেকে গাড়িতে করে সিকটে যেতে লাগে ৯০ মিনিট। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় এই কারাগারে ৪০ হাজার পর্যন্ত বন্দি রাখা যায়। এখানে বন্দিদের পরিবারের সদস্য বা কোনো দর্শনার্থীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয় না। আদালতের বিচারকাজ চলে জুমের মাধ্যমে। কারাগারের দেড় মাইলজুড়ে মোবাইল ফোনের সিগন্যাল ব্লক করে রাখা হয়েছে। এখানেই বন্দি রয়েছে এমএস 13 ও বারিও 18 বা এইটিনথ স্ট্রিট গ্যাংয়ের সদস্যরা।

গ্যাং সংশ্লিষ্টতা থাকলেই যে কাউকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে ২০২২ সালে ক্ষমতা দেন বুকেলে। এরপরই রাতারাতি ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। কুখ্যাত সব অপরাধীদের জেলে ঢুকিয়ে রাতারাতি নিরাপদ দেশগুলোর একটি হয়ে ওঠে এল সালভাদর। একই সঙ্গে এমন অভিযানের কারণে বুকেলের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়।

কোনো কোনো অপরাধীকে শত বছর বা তার চেয়েও বেশি সাজা দেওয়া হয়েছে। অনেককে অবশ্য এখনো অভিযুক্তই করা হয়নি। কিন্তু কারাগারের পরিচালক জানান, কোনো কারাবন্দিই এখান থেকে বের হতে পারবে না। তার কথা কতটা সত্য, তা কারাগারের নিরাপত্তাই বলে দেয়। কারাগারকে ঘিরে রাখা কাঁটাতারে হাইভোল্টেজ বিদ্যুৎ রয়েছে। কারাবন্দিদের প্রতিদিন মাত্র আধা ঘণ্টার জন্য সেল থেকে বের করা হয়। আর ২৪ ঘণ্টা ধরে জ্বালিয়ে রাখা হয় বাতি।

আবার কয়েদিদের জন্য আলাদা টয়লেটের কোনো ব্যবস্থাই নেই। প্রতিটি সেলের ভেতর দুটি করে উন্মুক্ত টয়লেট রয়েছে। বন্দিদের খাবার খেতে হয় হাতে। কেননা খাবারের সঙ্গে কোনো চামচ দেওয়া হয় না। এক সময় যারা এল সালভাদরের ৯০ শতাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ রেখেছিল, এখন তারাই ভয়াবহ এই কারাগারে বন্দি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও তার দেশের অপরাধী ও অভিবাসীদের এই সিকট কারাগারে পাঠাতে চান। আমেরিকার এমন প্রস্তাবে রাজিও হয়েছেন বুকেলে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আরও একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান সেনাবাহিনী

ছুটির ৩ দিনে ঢাকায় টানা সমাবেশ

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

পাকিস্তানে হামলার শঙ্কা, দুই দেশের নেতাদের ফোন করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

কুতুবদিয়ায় কাফনের কাপড় পরে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি

আবারও ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলি, তীব্র উত্তেজনা

মাটি কাটার দায়ে ৮ জনের কারাদণ্ড

ঢাকায় আজও বইছে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস

কলকাতার হোটেল ভয়াবহ আগুন, নিহত ১৪

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মধ্যস্থতা থেকে সরে আসার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

১০

নাতনিকে ইভটিজিং, প্রতিবাদ করায় নানাকে কুপিয়ে হত্যা

১১

বাড়িতে ঢুকে মা-বাবাকে মারধর করে মেয়েকে অপহরণ, গ্রেপ্তার ১

১২

গাজায় আরও অর্ধশতাধিক নিহত, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা অনেকে

১৩

কেমন থাকবে আজ ঢাকার আবহাওয়া

১৪

তিন সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই : ফারুকী

১৫

শেষ হয়েছে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা, ইলিশ ধরতে প্রস্তুত ভোলার জেলেরা

১৬

পাট শ্রমিক দলের সভাপতি হলেন সাঈদ আল নোমান

১৭

সাতক্ষীরায় বিএনপির সার্চ কমিটিতে আ.লীগ নেতারা

১৮

৩০ এপ্রিল : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

১৯

বুধবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

২০
X