অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আর এই পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার প্রয়োজন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক গতিশীলতা ফেরাতে নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ব্যাংক, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব খাতের সংস্কার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। আর এই তিন খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। বৈঠকে দুদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সংস্কার প্রয়োজন। যেমন ব্যাংক খাতের সংস্কার, রাজস্ব সংস্কার, ক্যাপিটাল মিডিয়া। এগুলো আমাদের জন্য ইমেডিয়েট কনসার্ন। কারণ, এসব সংস্কার না করলে পরে এটা আমাদের জন্য কঠিন হবে। এই তিন খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য।
তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটেনের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগ করেছেন। আরও বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হবে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, তা না হলে বেসরকারি খাত আসবে না। বাংলাদেশ এখন যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বাজারে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। রপ্তানি বাড়াতে পণ্য বৈচিত্র্যকরণেও গুরুত্ব দেন তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাজ্য মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করছে। আমরা এগুলোও চালিয়ে যাব। ক্যাপিটাল মার্কেট ও ট্রেড পলিসি পুনর্গঠনে যুক্তরাজ্য আমাদের সহায়তা করবে। এ বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। এর আগে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করব। যুক্তরাজ্য জি-টু-জি ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করবে। সে দেশের বড় বড় বাণিজ্য খাত আমাদের এখানে কাজ করবে। শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ও শিশু সুরক্ষায় কাজ করবে তারা।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শুধু যুক্তরাজ্য নয় অন্য দেশেও অর্থ পাচার হয়েছে। এগুলো ফেরাতে দরকার হলে যে কোনো দেশের সঙ্গে আলোচনা করব। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য কী ধরনের সহায়তা করবে, এ বিষয়ে কথা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এটা নিয়ে কাজ করছে।
আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে উল্লেখ করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে শক্তিশালী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্পর্ক সম্প্রসারণে খুবই আগ্রহী। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারের ক্ষেত্রে যেটা অর্থ উপদেষ্টা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন এবং সহায়তা প্রয়োজন ভাবছেন, সেখানেই যুক্তরাজ্য সমর্থন করবে। আলোচনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণে ব্যবসার পরিবেশ, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস এবং ডাইভার্সিফিকেশনে গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানান তিনি।
সারাহ কুক বলেন, আমরা আলোচনা করেছি কীভাবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারকে সমর্থন করতে পারে। কীভাবে আমরা অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের একত্র করতে একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং কীভাবে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সরাসরি বিনিয়োগ বৃদ্ধি বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। আমাদের একটি খুব শক্তিশালী এবং বিনিয়োগের পরিবেশ রয়েছে। অবশ্যই আমরা বাংলাদেশে আরও সরাসরি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেখতে চাই।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা দায়িত্বশীল বিনিয়োগকারী। কীভাবে আমরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি করতে পারি এবং আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে পারি, সে বিষয়ে আমি উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি।