রাজস্ব আদায়ে প্রায় প্রতি বছরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাব এবং সিজিএর হিসাবে বড় ধরনের গরমিল থাকে। বিভিন্ন দপ্তরের হিসাবেও পার্থক্য থাকে। এই গরমিল দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এনবিআরের আয়কর বিভাগের সব লেনদেন এখন এ-চালানের (অটোমেটেড চালান) মাধ্যমে হলেও শুল্ক-ভ্যাটে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু লেনদেন হয়। শিগগির শুল্ক ও ভ্যাটের সব লেনদেন এ-চালানের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের ক্যাশ অ্যান্ড ডেবিট ম্যানেজমেন্ট কমিটির (সিডিএমসি) সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায়ে সব ধরনের লেনদেন এ-চালানের মাধ্যমে না হওয়ায় সিজিএর হিসাব এবং এনবিআরের হিসাব ভিন্ন হচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাসের হিসাব ভিন্ন ভিন্ন হচ্ছে। এতে সরকারি হিসাবের তথ্যে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যেও গরমিল দেখা গেছে। সরকার এসব বিভ্রান্তি দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে। আর এর অংশ হিসেবে এনবিআরের শুল্ক ও ভ্যাট বিভাগের সব লেনদেন এ-চালানের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে সিডিএমসির ৫২তম বৈঠকে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় কার্যক্রম ই-পেমেন্ট থেকে এ-চালানে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই বৈঠকে এনবিআর প্রতিনিধি জানান, আয়কর সংক্রান্ত সব ধরনের কর আহরণ কার্যক্রম এ-চালানের মাধ্যমে হচ্ছে। তবে শুল্ক বিভাগের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত রাজস্ব আহরণ এখনো এ-চালানে নিয়ে আসার কাজ শেষ হয়নি। আর এনবিআরের সহযোগিতায় সব ধরনের রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম এ-চালানের মাধ্যমে হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। আর সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করবে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, শুল্ক বিভাগের রাজস্ব আহরণের প্রায় ৯০ শতাংশ লেনদেন হয় ই-পেমেন্টের মাধ্যমে। আর কিছু ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণ হয় ম্যানুয়ালি। ফলে এনবিআর ও আইবাসের তথ্যের মধ্যে কিছু ঘাটতি তৈরি হয়। এ ছাড়া ভ্যাট আদায়ের বেশিরভাগ কার্যক্রম এখনো ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। ফলে এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হতে বিলম্ব হওয়ায় দুই সংস্থার কাছে দুই ধরনের হিসাব থাকে। আর এ-চালানের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ হলে সিজিএ এবং আইবাসে টাকা জমা হতে সময় লাগবে না। তাৎক্ষণিকভাবে আইবাসের হিসাবে জমা হবে রাজস্ব আহরণের টাকা। এতে করদাতাদের অসুবিধা কমবে। এক এবং অভিন্ন হিসাব থাকবে সব সংস্থার কাছে। এ-চালান রাজস্ব ও সেবা ফি বাবদ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার ওয়েবভিত্তিক একটি পদ্ধতি। অর্থ বিভাগ ২০১৯-২০ এ পদ্ধতি চালু করে। এ-চালান সিস্টেম ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের যে কোনো শাখার কাউন্টার, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস এবং ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ও সেবা ফি সরকারি কোষাগারে তাৎক্ষণিকভাবে জমা করা যায়। আর প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান তার অংশের জমা একই দেখতে পান। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো—ওয়েবসাইটে গিয়ে চালানের সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা যায়।