

ভোটাররা যদি সৎ মানুষকে নির্বাচিত না করেন, তবে তার ফল ভোগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, অসৎ লোককে নির্বাচিত করলে কপালে ভোগান্তিই আসবে। শুরু থেকেই খুঁজে দেখুন— লোকটা সৎ কিনা। দল কোনটা, সেটা বড় কথা নয়।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে দুদকের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের অফিস ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় তিনি বলেন, চাঁদাবাজ, ঘুষখোর ও অসাধু লোকেরা নির্বাচনে আসলেই জনগণের পিঠে বাড়তি বোঝা চাপায়। যে ব্যক্তি অনেক টাকা খরচ করে নমিনেশন নিয়ে আসে, তার প্রথম কাজ হয় সেই টাকা ওঠানো। আর সে টাকা ওঠাবে আপনার ঘাড়ে পা রেখেই।
সম্পদের বিবরণীকে ‘নির্বাচনের আয়না’ উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সৎ মানুষ যখন বিবরণী জমা দেন, তার দাখিলকৃত তালিকা আর বাস্তব হিসাব এক থাকে। গরমিল থাকলেই বুঝবেন— তার চরিত্রে সমস্যা আছে।
২০০৮ সালের একটি আলোচিত ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ৫.২ একর সম্পদের বিবরণী দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুসন্ধানে আমরা পাই ২৯ একর। তখনই তার নমিনেশন বাতিল হওয়ার কথা ছিল। দুদক দুর্নীতি শনাক্ত করলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
দুদকের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলা প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি বড় নয়; তবে এর কাজ আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমরা কাজ করি— আপনারা সবসময় টের পান না।
তিনি আরও বলেন, সব প্রার্থী দুর্নীতিবাজ নন, তবে কিছু মানুষ অনিয়ম করবেই। আমরা অনিয়ম পেলেই নির্বাচন কমিশনকে জানাব। আর যা আমাদের চোখ এড়িয়ে যাবে— তা সাংবাদিকরা জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
শেষে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, এই পুণ্যভূমির জনগণই ঘোষণা করবেন— দুর্নীতিগ্রস্ত নির্বাচন হতে দেবেন না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী, দুদক সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীমসহ দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া রোববার সকাল ৯টা থেকে সিলেট নগরীর কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর-সংস্থাসমূহে সেবার মান বৃদ্ধি, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সিলেটে সমন্বিত জেলা কার্যালয় আয়োজিত দুদকের ১৯১তম গণশুনানি শুরু হয়।
গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তিতে হয়রানির শিকার বা সেবা বঞ্চিত সংক্ষুব্ধ জনসাধারণ তাদের অভিযোগসমূহ সিলেট জেলার সব সরকারি দপ্তর প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সেবা বঞ্চিত জনসাধারণের উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে দুদক কর্তৃক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সরকারি পরিষেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে সততা, নিষ্ঠা, জবাবদিহিতা ও মূল্যবোধ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করাই উক্ত গণশুনানির মূল অভিপ্রায়।
এর আগে গণশুনানিতে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, বুথ স্থাপন করে অভিযোগ সংগ্রহ, অভিযোগ বাক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুদকের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন