ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপকে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য স্বীকার করে হলফনামায় স্বাক্ষরের নির্দেশ দিয়ে ডিক্রি জারি করা হয়েছে। ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা প্রিগোজিন নিহত হওয়ার পর তার যোদ্ধাদের নতুন আদেশ দিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খবর আলজাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ানের।
খবরে বলা হয়, অবিলম্বে রাশিয়ার ওয়াগনার বাহিনীর হাজার হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা এবং অন্য সামরিক ঠিকাদারদের রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতেই পুতিন এমন আদেশ দিয়েছেন। গত শুক্রবার ক্রেমলিনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডিক্রিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে যারা সেনাবাহিনীর হয়ে কাজ করছেন বা সহায়তা করছেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্যের হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। ওয়াগনার যোদ্ধাদের রুশ সামরিক বাহিনীর কমান্ডার এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের আদেশ মানতে বাধ্য বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে প্রিগোজিনকে বহন করা বিধ্বস্ত বিমানের আরোহীদের মৃতদেহ ও ফ্লাইট রেকর্ডার দুটি উদ্ধার করা হয়েছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মৃতদেহগুলো শনাক্ত করতে জেনেটিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। গত বুধবার মস্কোর উত্তরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে—এমন জল্পনা ডালপালা মেলেছে। কিন্তু ক্রেমলিন প্রিগোজিনকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল, এমন দাবি পুরোপুরি মিথ্যা বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ।
প্রিগোজিন এক সময় পুতিনের খুবই ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তার ডাক নাম ছিল ‘পুতিনস শেফ’। কিন্তু তাদের সেই সম্পর্ক টুটে যায় গত জুনে, প্রিগোজিনের নেতৃত্বে কয়েক হাজার ওয়াগনার যোদ্ধার বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। মাত্র ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী ওই বিদ্রোহকে পুতিন বর্ণনা করেন বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে। পরে এক চুক্তির মাধ্যমে ওই বিদ্রোহ শেষ হয়। চুক্তিতে ওয়াগনারের যোদ্ধাদের রাশিয়ার নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অথবা মস্কোর মিত্র বেলারুশে চলে যাওয়ার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে বলা হয়। প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যাওয়া বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু তখনই অনেক পর্যবেক্ষক প্রিগোজিনকে ‘মৃত মানুষ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, পুতিন কখনোই ওয়াগনারের প্রধানকে ক্ষমা করবেন না।
প্রিগোজিনের মৃত্যু নিয়ে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেশকভ বলেন, বুধবার তিভিয়ের অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১০ আরোহীর শোচনীয় মৃত্যু নিয়ে নানা জল্পনা ছড়িয়েছে। আর পশ্চিমাদের ক্ষেত্রে এসব জল্পনা অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকেই হচ্ছে। এসবই পুরোপুরি মিথ্যা। আসলেই কী ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা বেশিকিছু জানি না। ঘটনার তদন্ত চলছে।
জি-২০ সম্মেলনে আসছেন না রুশ নেতা : আগামী ৯ এবং ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে বসছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর সংগঠন জি-২০-এর শীর্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যোগ দেবেন না। সম্মেলনে পুতিনের যোগ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে গত শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, ওই সময় জরুরি সামরিক সক্রিয়তার কারণেই প্রেসিডেন্ট পুতিন শারীরিকভাবে সম্মেলনে হাজির থাকতে পারবেন না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সশরীরে হাজির না হলেও ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে ভাষণ দেবেন পুতিন। প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেননি পুতিন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমান্ত পেরোননি তিনি। এর আগে গত বছর নভেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আয়োজিত জি-২০ সম্মেলনে যাওয়ার পরিকল্পনাও বাতিল করেছিলেন তিনি। মাস কয়েক আগে জি-২০-তে পুতিনের যোগদান সম্পর্কে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি বলেছিলেন, সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। শেষ বার ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন পুতিন।
মন্তব্য করুন