যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে দেওয়া প্রথম ভাষণে দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজনীতিকে জনগণের সেবায় ফিরিয়ে দিয়েছে।’ তবে এ পরিবর্তন আনতে যে কিছুটা সময় লাগবে, সেটাও স্বীকার করে নেন নতুন এ প্রধানমন্ত্রী। এদিকে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে ৪১২টিতে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে অভিনন্দনে ভাসছেন কিয়ার স্টারমার। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় কিয়ার স্টারমারকে ইতোমধ্যে অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার নবনির্বাচিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ওই চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কথা জানায় লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ ছাড়া, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বনেতারা নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ডাউনিং স্ট্রিটে ভাষণের শুরুতেই কিয়ার স্টারমার দেশের প্রথম ব্রিটিশ-এশীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের অর্জনের কথা তুলে ধরেন। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনাক যে ‘নিষ্ঠা ও কঠোর পরিশ্রম’ করেছেন, তাও স্বীকার করেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন নতুন করে দেশ গড়া প্রয়োজন। আমরা কে তা নতুন করে আবিষ্কার করার সময় এসেছে।’ ইটের ওপর ইট গেঁথে দেশের অবকাঠামো পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেন স্টারমার। তবে সেই পরিবর্তন আনতে যে কিছু সময় লাগবে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশে পরিবর্তন নিয়ে আসা সুইচ টেপার মতো কোনো বিষয় নয়। তবে পরিবর্তনের কাজ অবিলম্বেই শুরু হবে। আমাদের কাজ জরুরি। আজই আমরা তা শুরু করব।’ ডাউনিং স্ট্রিটে যাওয়ার আগে ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বাকিংহাম প্যালেসে দেখা করতে যান জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। এ সময় তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন রাজা চার্লস। এর আগে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩২৬টি। সেখানে ৪১২টি আসনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে সরকার গঠন করছে বামপন্থি দল লেবার পার্টি। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে মাত্র ১২১টি আসন। অর্থাৎ ২শর বেশি আসন তারা হারিয়েছে। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পেয়েছে ৭১টি আসন। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে অবসান হচ্ছে কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসনের।
মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু : প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডাউনিং স্ট্রিটে দেওয়া ভাষণের পর মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেছেন কিয়ার স্টারমার। অ্যাঞ্জেলা রেইনারকে উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন র্যাচেল রিভস। তিনি যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ডেভিড ল্যামি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইভেত্তি কুপার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে জন হিলিকে। ব্রিজেত ফিলিপসন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিচারমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শাবানা মাহমুদ।
ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিলেন ঋষি সুনাক : প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পাশাপাশি কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করে সুনাক বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমার প্রথম কথা, আমি দুঃখিত। সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমি আমার কাজ করেছি; কিন্তু আপনারা স্পষ্টভাবে যুক্তরাজ্যে সরকারের পরিবর্তন চেয়েছেন। আপনাদের এই রায়ের পর আর কোনো কথা হয় না।’ কনজারভেটিভ পার্টির ঐতিহাসিক পরাজয়ের দায়ভার মাথায় নিয়ে সুনাক বলেন, ‘আমি আপনাদের (ভোটারদের) ক্ষোভ, অসন্তোষের কথা শুনতে পেয়েছি। আমি এই পরাজয়ের দায়ভার গ্রহণ করছি।’