

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের যে সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে, তা দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। দলের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন দলটির নেতারা। এই লক্ষ্যে ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও মহানগরের শীর্ষ নেতারা।
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রামপুরাসহ যেসব এলাকায় সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের শিথিলতা ছিল, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি নিষ্ক্রিয়দের চাঙ্গা করতেও উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরে ২৭টি ইউনিট কমিটি বাতিল করে মহানগর উত্তর। যাত্রাবাড়ীসহ দক্ষিণের যেসব জায়গায় সহিংসতা ঘটেছে, সেসব জায়গায় আওয়ামী লীগের দায় থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এমনকি বিভিন্ন ইউনিট কমিটি বাতিল করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। অন্যদিকে, মহানগর উত্তর নেতাকর্মীদের শিথিলতা কাটাতে এলাকাভিত্তিক সফরের চিন্তা করছেন শীর্ষ নেতারা।
এ লক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সমন্বয়কদের নিয়ে এক বৈঠকে বসে। সেই বৈঠকে বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে এলাকায় এলাকায় সফরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদিও বৈঠকটি মুলতবি করে আজ শনিবার আবারও বৈঠক করবে দলটি।
এ বিষয়ে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এলাকায় এলাকায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে শিগগির সফর করা হবে। সেসব জায়গায় কার কী দায় ছিল, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্গত সব ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠক করেন শীর্ষ নেতারা। এই বৈঠকেও নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করে একে অন্যের প্রতি দোষ চাপান। পরে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সূত্র জানায়, এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন শাখার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। বৈঠকের একপর্যায়ে যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতির বিষয়টি উপস্থাপন করে। এ সময় উপস্থিত ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্গত পাঁচটি থানা ও ৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতারা পাল্টা জবাব দেন।
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন শাখার নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি তাদের কমিটিও বাতিল করে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে সূত্রে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী, ডেমরাসহ বিভিন্ন স্থানের ইউনিট কমিটির নেতাদের অনেককে বিএনপির মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে। অনেকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে মদদ দেওয়া, এমনকি অংশও নিয়েছেন। এসব বিষয়ে ভিডিও ও ছবি মহানগরের শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ আকারে জমা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, নগরের শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের একে অন্যকে দোষারোপ না করে বরং সমন্বয়হীনতা দূর করতে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, তৃণমূলের কর্মীরাই আওয়ামী লীগের শক্তি। সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে তৃণমূলের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। বিএনপি-জামায়াত জঙ্গিবাদী শক্তির নৈরাজ্যের সময়ও তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে থেকে জানমালের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চটা করেছে। নেতৃত্বের দ্বিধাগ্রস্ততা বা দ্বন্দ্বের কারণে কোথাও কোথাও তারা প্রয়োজনমতো দাঁড়াতে পারেনি। তবে সামগ্রিকভাবে আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে থেকে নৈরাজ্য রুখে দিয়েছে।