কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০৬:৫৯ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হার্ডলাইনে গেল বিএনপি

অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা
হার্ডলাইনে গেল বিএনপি

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থানের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের নতুন পর্যায় শুরু করছে দলটি। গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে লক্ষ্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি দৃশ্যত হার্ডলাইনে চলে গেল।

অন্যদিকে বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলন ঘোষণার পরও নিজেদের অবস্থানে অনড় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলটির নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। আজ ঢাকার প্রবেশমুখে শান্তি সমাবেশের ডাক দিলেও অনুমতি না মেলায় গতকাল রাতে সেই কর্মসূচি স্থগিত করে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে প্রতিটি থানা ওয়ার্ড কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারা দেবে।

এর আগে গতকাল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, শনিবার (আজ) বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঢাকার সব প্রবেশমুখে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে তাদের কেউ ডিএমপির কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমতি নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কোনো দলকেই এ কমসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে দুপক্ষ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কোনো রকম অঘটন ছাড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শুক্রবারের বৃহৎ জনসমাবেশের সমাপ্তি সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারত। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সেই সমাবেশ থেকেই রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা শুরু হলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালবেলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদলই হার্ডলাইনে আছে। এমন পরিস্থিতি তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। শুক্রবারের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য। আগামী দিনে এরকম কী ঘটবে না ঘটবে, আমরা জানি না। বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। যদি নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে ভালো। তা না হলে নিয়তি এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’

শুক্রবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর চারটি প্রবেশমুখে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাকি শরিকরাও।

এর মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে এক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা বিএনপি একদফার শেষ ধাপের আন্দোলনে নামল। এখন ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চলমান আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চায় দলটি। আপাতত এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। শনিবারের অবস্থান শেষে পরদিনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এভাবে প্রতিদিনই ঢাকায় কোনো না কোনো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। মহাসমাবেশের বক্তৃতায় শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই ‘লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার’ জন্য দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ সমবেতদের অঙ্গীকারও করিয়েছেন। এর মাধ্যমে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় অবস্থানের পরোক্ষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা কর্মসূচি থাকতে পারে। অবস্থান কর্মসূচির পর ঢাকায় সমাবেশ, বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় একাধিক জায়গায় বড় সমাবেশ করা হতে পারে। আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে একদফার কর্মসূচি কয়েক দিনের জন্য স্থগিত রাখা হতে পারে। ওই সময়ের মধ্যেও ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ দেখা না গেলে ২০ আগস্ট থেকে ফের লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

মহাসমাবেশ থেকে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামীতে পরপর কর্মসূচি আসবে। শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে বিজয় সুনিশ্চিত করা হবে।’

মহাসমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঢাকায় যারা এসেছেন তারা ঢাকায় থাকেন। এই সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরে যাব না।’

বিএনপির এমন ঘোষণায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবারের সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। রাস্তা বন্ধ করলে আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেব। আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়িয়ে দেব। ভাঙচুর করতে এলে হাত ভেঙে দেব।’

ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে এসেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে আবার চলে যান।’

অবস্থান হবে চার প্রবেশমুখে: জানা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ চারটি প্রবেশমুখে আজ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উল্টো দিকে রাস্তার পূর্ব পাশে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি থাকবেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। গাবতলী এসএ খালেক বাসস্টেশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াবাজার বিএনপি অফিসের সামনে কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার থেকে নেমে চিটাগাং রোডের শনির আখড়া ও মুক্তি সরণি এলাকায় কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে বিএনপির শরিকরাও কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎভাবে মাঠে রয়েছে। আজ শনিবার ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে তারাও পৃথকভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ মিরপুর মাজার রোডে, ‘১২ দলীয় জোট’ চিটাগাং রোড দনিয়া কলেজ সংলগ্ন এলাকায়, ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ চিটাগাং রোডের সাইনবোর্ডের আগের এলাকায়, ‘গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি’ মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টোদিকে গণফোরাম চত্বরে, ‘এনডিএম’ চিটাগাং রোড সাইনবোর্ড সংলগ্ন এলাকায় এবং এলডিপি উত্তরা আজমপুর বাসস্টেশন সংলগ্ন এলাকা, গাবতলী টেকনিক্যাল মোড় ও যাত্রাবাড়ী মোড় এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি করবে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক কালবেলাকে বলেন, একদফা দাবি আদায়ে রাজপথে টানা কর্মসূচি থাকবে। আন্দোলনের বিভিন্ন ফর্ম যেগুলো আছে সমাবেশ, বিক্ষোভ, ঘেরাও—এ ধরনের কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে আসতে পারে। তবে সবকিছুই হবে শান্তিপূর্ণ। ক্ষমতাসীনরা গায়ে পড়ে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও আন্দোলনরত দলগুলো শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগ-যুবলীগের পাল্টা কর্মসূচি, রাতে স্থগিত : বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। শনিবার সকাল ১১টা থেকে দলের নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানানো হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও উত্তর আওয়ামী লীগ তাদের নিজ নিজ এলাকায় ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নেবে বলে জানান দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। তবে শুক্রবার রাতে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ তাদের অবস্থান কর্মসূচি বিরত রাখবে। প্রতিটি থানা ওয়ার্ড কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারা দেবে।

সতর্ক পুলিশ: রাজধানীতে আসা-যাওয়ার সড়ক দখলে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমাবেশে পুলিশ হস্তক্ষেপ করবে না। তবে জনদুর্ভোগ হয়, রাস্তা বন্ধ হয় এমন কর্মসূচি থেকে সরে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সবসময়ই পুলিশ অনুরোধ জানিয়ে আসছে। কাউকে রাজধানীতে আসা-যাওয়ার সড়ক দখলে নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, ‘জনদুর্ভোগ হবে এমন কোনো কর্মসূচি ঢাকার কোনো প্রবেশমুখে কাউকে করতে দেওয়া হবে না। মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি হলেও প্রবেশপথ সামান্য সময় আটকা থাকলে অনেক গাড়ির জটলা তৈরি হয়ে যায়। প্রবেশমুখে অবস্থান নিলে ব্যাপক জনদুর্ভোগ হবে।’

পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল মহাসমাবেশ থেকে বিএনপি রাজধানীর প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার পর করণীয় ঠিক করতে পুলিশ কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ ছাড়াও ঢাকা রেঞ্জের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও ঢাকা জেলা পুলিশও বৈঠক করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীর শ্যামপুরে প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ আগুন

ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি স্থগিত করল গাজা যোদ্ধারা

শ্বেতাঙ্গদের যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দিতে চান ট্রাম্প

বাংলা সাইনবোর্ডে আপত্তি ইলন মাস্কের

ঢাকায় ঝিরঝির বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা  

মঙ্গলবার ঢাকার যেসব মার্কেট বন্ধ

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

পটুয়াখালীতে বেড়েছে বোরো আবাদ

১১ ফেব্রুয়ারি : আজকের নামাজের সময়সূচি

১০

চলতি পথে হঠাৎ বিকল ট্রেন, যাত্রীদের আপ্যায়নে গ্রামবাসী

১১

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পদযাত্রা 

১২

‘৫ আগস্টের পর দেশে ইসলামের পক্ষের পরিবেশ তৈরি হয়েছে’

১৩

বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ গেল নারীর

১৪

স্থগিত কমিটি বহালের দাবিতে ছাত্রদের সড়ক অবরোধ

১৫

আসামি ধরতে গিয়ে তোপের মুখে খালি হাতে ফিরল র‌্যাব

১৬

মোবাইলের ডিসপ্লে নষ্ট করায় হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

১৭

ভুল চিকিৎসায় ফের রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ভাঙচুর

১৮

‘দরজা ভেঙে ভেতরে দেখি বাবার গলা কাটা মরদেহ’

১৯

আমরা জনগণের পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

২০
X