সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এক মন্ত্রী, দুই প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক এক প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাৎসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এসব অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৫ বছরমেয়াদি ১ হাজার ৫০২ কোটি টাকার ‘সুফল প্রকল্পে’ মন্ত্রী ও তার ছেলে ১০ শতাংশ কমিশন নিয়ে ঠিকাদারদের কাজ দেন। বিভিন্ন খাতে ভুয়া খরচ দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। ৮০-৯০ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে বন কর্মকর্তাদের বদলি ও পোস্টিং করেন। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণে মারাত্মক প্রভাব রয়েছে এরূপ তরল বর্জ্য সৃষ্টিকারী বিভিন্ন কলকারখানায় ইটিপি পরিদর্শন না করেই তারা সার্টিফিকেট প্রদান করেন। প্রায় ৭ কোটি টাকার বিনিময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমির রেজ্যুলেশনে স্বাক্ষর করে বিএফডিআইসির তৎকালীন চেয়ারম্যানকে ওই জমি জলবায়ু ট্রাস্টকে প্রদানে বাধ্য করেন বলে জানতে পেরেছে দুদক।
জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়েছে। নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরে লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার টিআর ২ কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা, কাবিখা ও কাবিটার ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ২৬০ টন গম ও ২৩৪ টন চাল বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানতে পেরেছে দুদক।