মৃত্তিকা সাহা
প্রকাশ : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ এএম
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৬ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

দুর্বল ব্যাংকের কর্মকর্তারা মানসিক চাপে বিপর্যস্ত

তারল্য সংকট
দুর্বল ব্যাংকের কর্মকর্তারা মানসিক চাপে বিপর্যস্ত

তারল্য সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকের এই পরিস্থিতির জন্য উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা দায়ী হলেও এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং গ্রাহকদের। ব্যাংকের গ্রাহকরা যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে না পেরে চাপের মধ্যে রয়েছেন, তেমনি এসব গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পেরে এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারাও চাপের মধ্যে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে এক ব্যাংক কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখেছেন, দুর্বল ব্যাংকের অফিসাররা কতটা চাপের মধ্যে অফিস করছেন, তা অন্য ব্যাংকের অফিসারদের কল্পনার বাইরে। এমনিতেই ব্যাংকাররা নানামুখী চাপে থাকার কারণে দিন দিন স্ট্রোকসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে, আর সেই চাপ এখন কয়েকশ গুণ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এসব ব্যাংকের অফিসাররা খুব তাড়াতাড়ি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাবে। এসব ব্যাংক আবার কবে স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারবে কিংবা আদৌ পারবে কি না, তা ওপরওয়ালা ভালো জানেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, এখন ব্যবসায়ীদের টাকা আমরা দিচ্ছি। ক্যাশ লেনদেন যারা করছে, তাদের টাকাও দিচ্ছি। আবার অসুস্থদের টাকা এবং রেমিট্যান্সের টাকা আমরা দিচ্ছি। কারণ দিন শেষে আমরাও তো মানুষ। মানবিকতা তো আমাদেরও আছে। এফডিআরের টাকাও আমরা অল্প অল্প করে দিচ্ছি। তবে যারা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে টাকা নিয়ে যেতে চাচ্ছে, তাদের আমরা পুরো টাকা দিতে পারছি না। এই গ্রাহকদের চাপই এখন বেশি সামলাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে এমন একজন গ্রাহক একসঙ্গে পুরো টাকা তুলতে না পেরে একপর্যায়ে আমাদের ওপর হাত তোলেন। এসব পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে মাথা ঠিক রাখা কঠিন। এতে চাপ তো এমনিতেই তৈরি হয়। ইদানীং এই চাপ সামলাতে গিয়ে অনেক ব্যাংক কর্মকর্তাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় এসব দুর্বল ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নয়নে টাকা ছাপিয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। এতেও পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে না। এখনো গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না। এসব ব্যাংকের গ্রাহকদের অভিযোগ, তারা জরুরি প্রয়োজনেও এই দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। এমনকি মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তারা তাদের মেয়াদি আমানতের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এতে তারা বড় ধরনের চাপে পড়ছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহক বেলাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য সহায়তার খবর পেয়ে গত রোববার সকালে ব্যাংকটির উত্তরা শাখায় গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে দুপুরের পর যেতে বলে। কিন্তু দুপুরের পর গেলেও তাকে বলা হয়, তাদের শাখায় কোনো টাকা আসেনি। তারা মঙ্গলবার যেতে বলে। মঙ্গলবার গেলে তাকে একই কথা বলে ব্যাংক। কর্তৃপক্ষ বলে, পরের সপ্তাহে আসেন, টাকা পেলে দিতে পারব। এই গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আগে যদিও ৫ হাজার টাকা করে তুলতে পেরেছি। এখন সেটাও দিচ্ছে না। এভাবে আমার মতো হাজার হাজার গ্রাহককে হয়রানি করা হচ্ছে।’ তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ইউনিয়ন ব্যাংকে আমার সারা জীবনের সঞ্চয় রয়েছে। আদৌ কি সেই টাকা ফেরত পাব? এভাবে আর কত দিন ব্যাংকে ধরনা দেব?’

বেলাল হোসেনের মতো আরও হাজার হাজার গ্রাহক দেশের ইসলামী শরিয়াভিত্তিকসহ আরও কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। বিগত সরকারের সময়ে এসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণের নামে টাকা লুটপাট করা হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এখন। ফলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, আমরা তো গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতেই কাজ করি। কিন্তু ইদানীং গ্রাহকদের এত বেশি রাগ-ক্ষোভ বেড়েছে, যা আমার এত দিনের চাকরি জীবনে দেখি নাই। অনেকেই মারমুখী আচরণ করেন। মনে হয় যেন আমি তার টাকা মেরে দিয়েছি। এমন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কেননা আমরাও তো মানুষ। তাদের ক্ষোভের জায়গাটা বুঝি। কিন্তু দুঃখ লাগে এত ভালো একটা ব্যাংক কীভাবে চোখের সামনে এত খারাপ হয়ে গেল?

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন কালবেলাকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যখন এই দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছেন, তখন এই ব্যাংকগুলো থেকে গ্রাহকের টাকা উত্তোলনের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। সবশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে যে বড় অঙ্কের টাকা দিয়েছে, তারপর থেকে পরিস্থিতির উন্নয়ন হচ্ছে। এখন তারা বুঝে বুঝে গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা দিতে পারছেন। তবে যারা অপ্রয়োজনে টাকা তোলার জন্য যাচ্ছে, তাদের রুখে দিতে পারছে এই বলে যে, কেন আপনারা অপ্রয়োজনে টাকা নিচ্ছেন, আমাদের সঙ্গে লেনদেন করেন। এটা বলার অর্থ হচ্ছে, তাদের এখন ভরসার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। আশার কথা হচ্ছে, এই ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা আবার ফিরছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ 

অনলাইনে যেভাবে কাটবেন বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সিরিজের টিকিট

পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট?

প্লট দুর্নীতি / শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য শুরু

ভাসমান বীজতলা তৈরিতে সফল খুলনার রোকেয়া

ব্রাজিল থেকে ১২০ টাকায় গরুর মাংস আমদানির খবর ভিত্তিহীন

ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন : এনবিআর চেয়ারম্যান

ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি যেদিন

শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২৫ বিচারপতি

সাকিবের প্রিয় ‘শিকারের’ তালিকায় তামিম, দেখে নিন পুরো তালিকা

১০

‘ভয়ংকর আফ্রিদির’ মুখোশ খুললেন তানভীর রাহী

১১

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন শুরু

১২

তথ্য গোপন করে প্রধান শিক্ষক, অতঃপর...

১৩

পুঁজিবাজারের প্রতারক চক্র গোয়েন্দা সংস্থার নজরে: ডিএসই

১৪

পরিবর্তন হচ্ছে বাংলাদেশ জেলের নাম 

১৫

চট্টগ্রামে সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে ২ শ্রমিকের মৃত্যু

১৬

রাতে খাওয়ার পরও ক্ষুধা লাগার কারণ জেনে নিন

১৭

বৃষ্টি-গরম নিয়ে নতুন বার্তা দিল আবহাওয়া অফিস

১৮

প্রেমের স্মৃতি টেনে কিমের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন ট্রাম্প

১৯

কমলাপুর রেলস্টেশনে নারীকে কুপিয়ে হত্যা, প্রেমিক আটক

২০
X