জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ভারতকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার উত্তর এখনো পায়নি ঢাকা। তবে জবাব না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
রফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠির ব্যাপারে সরকারি চ্যানেলে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি আমরা। মিডিয়ায় কী এসেছে, তা আমরা আলোচনা করব না। আমরা ভারতের কাছ থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করব। তাদের পক্ষ থেকে উত্তর পেলে সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যবস্থা নেবে। যদি বন্দিবিনিময় চুক্তি দেখেন, আমি যতদূর মনে করতে পারি, টাইম লিমিট মেনশন নেই। এটার উত্তর পাওয়ার জন্য, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উত্তর আসার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা একটা সময় পর্যন্ত বিষয়টি দেখব। যে কোনো জিনিসের জবাব দেওয়ার একটা স্বাভাবিক সময় আছে। সেই সময়ের মধ্যে জবাব না এলে এটার আরেকটা তাগিদপত্র দেওয়া হবে।
জবাবের অপেক্ষার স্বাভাবিক সময় কতদিন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তির মধ্যে কাউকে ফেরাতে গেলে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করতে হবে।
আমরা কূটনৈতিক পত্রে অনুরোধ করেছি। স্বাভাবিক সময় নিয়ে সরাসরি কোনো উত্তর নেই। এটা নির্ভর করে বিষয়ের ওপর। আপনি যদি কোনো একটা চুক্তি নেগোশিয়েট করেন, সেই চুক্তির জন্য উত্তর-প্রতিউত্তর বিভিন্ন পর্যায়ে হতে থাকে; বছর পার হয়ে যায়, অনেক বছর পার হয়ে যায়। আপনি যদি কনস্যুলার অ্যাক্সেসের জন্য অনুরোধ করেন, সেটার জন্য একটা টাইম ফ্রেম আছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরানোর বিষয়টি সংবেদনশীল জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, এটা অত্যন্ত সংবেদনশীল একটা বিষয়। সংবেদনশীল বিষয়ে স্বাভাবিক সময়ে এটার কোনো ব্র্যাকেটিং করা মনে হয় আমার বা আপনাদের তরফ থেকে কোনোরকমের মন্তব্য করার সুযোগ নেই। এটা যতটুকু সময়ে দুই দেশের সরকার মনে করবে এটা সঠিক, সেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কোনো স্পেকুলেট করা ঠিক হবে না। গতকাল মাত্র চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, এখনই বলা মুশকিল বলেও জানান মুখপাত্র।
পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান স্ট্যাটাস কী, তা ভারত সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল আলম বলেন, এ বিষয়ে বিগত দিনগুলোতে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম থেকে আমরা প্রশ্ন পেয়েছি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র সচিব উত্তর দিয়েছেন। এটি নিয়ে আমার কমেন্টস করার সুযোগ নেই। আমি স্পেসিফিকলি বলতে পারব না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য না পাওয়ায় তাদের তদন্তের এই সংকট তৈরি হয়েছে। দ্রুতই এই সংকট কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতে গিয়ে পোল্যান্ডের স্টুডেন্ট ভিসা নিতে কেউ কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছেন জানিয়ে রফিকুল আলম বলেন, ঢাকা থেকে পোল্যান্ডের ভিসা ইস্যু করতে দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলেও জানান রফিকুল আলম।
এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কথা বলেন রফিকুল আলম। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে নতুন করে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবিসহ সব সংস্থা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে রফিকুল আলম বলেন, লিবিয়ায় ১২১ অভিবাসী বহনকারী একটি নৌকা ১৮ ডিসেম্বর লিবিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। লিবিয়ার নৌবাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ৮২ জনকে জীবিত উদ্ধার এবং কমপক্ষে ১৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। ঘটনার পর লিবিয়ার ত্রিপোলিতে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা দ্রুত বেশ কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন স্বেচ্ছাসেবক তাদের নিশ্চিত করেছেন যে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে আটজন নিহতসহ মোট ৩২ জন বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছেন। বাকি অভিবাসীরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। জীবিতদের বর্তমানে ত্রিপোলি থেকে ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত জাওয়াইয়া সিটিতে রাখা হয়েছে এবং মৃতদের পাবলিক প্রসিকিউশনের তত্ত্বাবধানে জাওয়াইয়া হাসপাতালে রাখা হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে আরও বাংলাদেশি নাগরিক থাকতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আমাদের ত্রিপোলিতে অবস্থিত দূতাবাস কাজ করছে। দূতাবাসের কর্মকর্তারা লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি আদায় করে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
এ ছাড়া নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনে নতুন বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপন করা হবে। সেবা খাতের পাশাপাশি উৎপাদন, নির্মাণ শিল্প, কৃষিকাজ, কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতিতে অবদানকারী খাতে অংশীদারত্বে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে প্রস্তাব পাঠানো হয়। গত ৫ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস খোলার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। নিউজিল্যান্ডে প্রায় ১০ (দশ) হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন এবং প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ হাইকমিশন স্থাপিত হলে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সরাসরি দূতাবাসের সব ধরনের কনস্যুলার সেবা পৌঁছানো সহজ ও সাশ্রয়ী হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি বৃদ্ধির নিমিত্তে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়ায় ও আফ্রিকা মহাদেশে অন্তত ১০টি পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশ মিশন এবং চীন, ব্রাজিল, জার্মানি, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে আরও ১০টি সাব-মিশন স্থাপন করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম।