ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার গাজীর বাজার এলাকার এনামুলের বাড়ি থেকে রাজহাঁস চুরি হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাঁস খুঁজতে এসে স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার বাড়ির পরিত্যক্ত টিনের ভাঙা ঘর থেকে বের হওয়া ধোঁয়ার গন্ধ দেখে সন্দেহ হয় হাঁস মালিকের। যাচাই করতে গেলে বেরিয়ে আসে, যুবলীগ নেতার ছেলে পরিত্যক্ত ঘরের ভেতর এক নারীকে হত্যার পর পুড়িয়ে লাশ গুমের চেষ্টা করছিল! এমন ঘটনার পর ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পোড়া লাশের দেহাংশ উদ্ধার করলেও শুরুতে নিহত ওই নারীর পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বেরিয়ে আসে, ওই নারীর নাম শারমিন বেগম, তার বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। তিনি যুবলীগের ওই নেতার প্রতিবেশী। তাকে হত্যার পর মুণ্ডু পাশেই ধানক্ষেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। দেহের বাকি অংশ পোড়ানো হচ্ছিল। ওই ঘটনায় ফারহান ভূঁইয়া রনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রনি এলাকায় বখাটে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জায়গা দখলের অংশ হিসেবে প্রতিবেশী শারমিনকে হত্যা করা হতে পারে। তা ছাড়া রনি শারমিনের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। এতে বাধা পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে ডেকে এনে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত শারমিন বেগম ও তার স্বামী নুরুল ইসলাম ৪০ বছর ধরে দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার হীরাপুর গ্রামের একটি জায়গায় মাটির ঘর করে বসবাস করেন। আগে তার বাড়ির কাজকর্ম করতেন ওই নারী। ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন। তাদের তিন মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। সোমবার রাতেও শারমিন বেগম ঘরেই ছিলেন। ভোরে ফারহান রনি তার মা অসুস্থ বলে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। দুপুরের দিকে তার লাশ মেলে।
নিহত শারমিন বেগমের স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, ভোরে ঘুম থেকে উঠে তিনি বের হন। তখন স্ত্রী ঘরেই ছিল। বিকেলে ফিরে শোনেন স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। কেন হত্যা করা হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
রাজহাঁস মালিক এনামুল জানান, তিনি ভাবছিলেন রনি তার হাঁস চুরি করে পোড়াচ্ছে। তিনি সামনে গেলে রনি জানায়, সে পাতা পোড়াচ্ছে। বিশ্বাস না হলে তিনি ও তার ভাই রোমান ঘরের ভেতরে ঢুকে দেখতে চান। ওই সময় ফারহান ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের মারার হুমকি দেয়। এতে সন্দেহ আরও বাড়লে তারাসহ গ্রামের লোকজন গিয়ে গর্তে পুড়তে থাকা লাশ দেখতে পান। পুলিশে খবর দিলে তারা এসে লাশ বের করেন। পোড়া হাতে চুড়ি থাকায় দেহটি নারীর বলে প্রথমে শনাক্ত হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, যে জায়গাটিতে শারমিনসহ তার পরিবার বসবাস করে, সেটির মালিক ফারহানের তিন ফুফু। কোনোমতে তাদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে পারলে জায়গাটি ফারহান ভোগদখল করতে পারবে। এ কারণে হয়তো ওই নারীকে সকালে ডেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
প্রতিবেশীরা বলেন, শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার বোনের জায়গা নিয়ে বিরোধ আছে। সেই জায়গাতেই থাকতেন শারমিন বেগম। মনে হয় জায়গা খালি করতেই এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় জাহের মিয়াসহ দুজন জানান, রনি মাদকাসক্ত। আগুনে পোড়ার গন্ধ পেয়ে মানুষ ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে যায়। হাঁসের মালিকও মনে করেছেন রনি হয়তো তাদের হাঁস পুড়িয়ে খেয়েছে। এজন্যই তারা পরিত্যক্ত জায়গার ভেতরে গিয়ে লাশ পোড়ানো দেখতে পান।
শাহনেওয়াজ ভূঁইয়ার ভাড়াটিয়া প্রত্যক্ষদর্শী মনোয়ারা বেগম বলেন, ভোরে ওই ঘর থেকে নারীকণ্ঠের চিৎকার শুনতে পাই। কেউ একজন বলছেন, ‘মাইরা লাইতাছে গো, মাইরা লাইতাছে’। একটু পরে আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে গেলে রনি আমাকে বলে ‘যাও, এখান থেকে চলে যাও।’
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুর ইসলাম বলেন, একজনকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। তার দেহের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে। পরে আটক যুবকের তথ্যমতে তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ধানের জমিতে পুঁতে রাখা অবস্থায় মাথা উদ্ধার করে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহতের মেয়েরা ছবি দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করেছেন।