আলী ইব্রাহিম
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৮ এএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাড়ছে শুল্ক

রোজার আগেই দাম বাড়ছে আপেল কমলা আঙুরের

রোজার আগেই দাম বাড়ছে আপেল কমলা আঙুরের

আইএমএফের চাপে রাজস্ব বাড়াতে যে অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার, তার মধ্যে আপেল, কমলা ও আঙুরের মতো ফলও রয়েছে। এতে আসন্ন রোজায় নিম্নবিত্ত তো বটেই, মধ্যবিত্তের পাতে নাও উঠতে পারে এসব ফল। কারণ আপেল-আঙুরের কেজি এমনিতেই তিনশ টাকা ছাড়িয়েছে। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে রোজার আগেই আরও দাম বাড়বে, এতে এসব ফল ‘বড় লোকের’ খাবারে পরিণত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর যে প্রস্তাব এনবিআর দিয়েছে, তার মধ্যে খেজুর ছাড়া প্রায় সব ধরনের ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফলের জুস আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ সংক্রান্ত দুটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ দুটি হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫। এই দুটি অধ্যাদেশ জারির পর এনবিআরের ভ্যাট বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও জারি করেছে। এর মধ্য দিয়ে অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে।

রোজার আগে ফলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সাধারণত ফলের আমদানি শুল্ক অনেক বেশি। নতুন করে ফলের ওপর শুল্ক বাড়ালে দাম আরও বেড়ে যাবে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে ফল নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। সরকার নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর কারণে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাবে। আগামীতে ফল বড়লোকের খাবার হিসেবে বিবেচিত হবে।

এদিকে, কার্বোনেটেড বেভারেজ অর্থাৎ দেশে উৎপাদিত কোমল পানীয়ের সরবরাহ পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক শূন্য থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে কোমল পানীয়ের বিশাল বাজারে বড় ধরনের ধাক্কা আসবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আর সরবরাহ পর্যায়ে এই শুল্কারোপের কারণে বাজারে কোমল পানীয়ের দাম অনেক বাড়বে। কোকাকোলা-পেপসিসহ কোমল পানীয় কিনতে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ।

এ ছাড়া নন কার্বোনেটেড পানীয়ের ক্ষেত্রেও নতুন করে ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হচ্ছে। অর্থাৎ মদ কিনতেও বেশি অর্থ গুনতে হবে। এর পাশাপাশি মোবাইলে কথা বলার খরচ এবং সিগারেটের দামও বাড়বে এনবিআরের নতুন করহারে। কারণ সিম ও রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে টেলিফোন সেবার সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হচ্ছে। আর তামাকযুক্ত সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে ১ শতাংশ।

জানতে চাইলে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজস্ব সুবিধা দেওয়ার কারণে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। রাজস্ব আহরণ বাড়াতে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত তো রয়েছেই। আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল, কর ছাড় কমিয়ে দিয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো।

এনবিআর সূত্র জানায়, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে যে অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে, তার মধ্যে টয়লেট টিস্যু থেকে শুরু করে ন্যাপকিন, ফেসিয়াল টিস্যু, সানগ্লাস, হ্যান্ড টাওয়েলের ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মিষ্টির দোকানের ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, রেস্টুরেন্টের খাবারে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে ৩ গুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ বিক্রিতে ভ্যাট ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ, এলপি গ্যাসে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। আর নিজস্ব ব্র্যান্ডের তৈরি করা পোশাক বিক্রিতেও ভ্যাটের হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান টিকিটে ভ্যাট ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের বিমান টিকিটে ভ্যাট ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা, এশিয়ার দেশগুলোর বিমান টিকিটে ভ্যাট ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা এবং ইউরোপ-আমেরিকার টিকিটে ভ্যাট ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রিন্টিং প্রেস থেকে শুরু করে মোটর কার ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, রিপেয়ার অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স, নন-এসি হোটেল, টেইলারিং শপসহ প্রায় ১৫ ধরনের ব্যবসায় ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করছে এনবিআর। পাশাপাশি ২৫ ধরনের পণ্য সরবরাহে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে, যার অধিকাংশ ভ্যাট হার ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, হার্ডরক, ট্রান্সফরমার, টিস্যুপেপার, চাটনি, আলু, তরল দুধ, টমেটো সস, ট্রান্সফর্ম অয়েল, নারিকেলের ছোলার তৈরি ম্যাট্রেস, সানগ্লাস, বিস্কুট, কয়েল জাতীয় পণ্য, রাবার প্রসেসিং অয়েলসহ বিভিন্ন পণ্য।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় স্থগিত পাকিস্তানি ব্যান্ডের কনসার্ট

খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সারা দেশে বিশেষ দোয়া

বিপিএল ২০২৬: কোন দলের অধিনায়ক কে, যা জানা গেল

বেলজিয়াম / যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য ফাঁস

শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে ভারতের অগ্রগতির কথা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মানবিক সংকটে স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকাই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গাজীপুর মহানগর পুলিশে বড় রদবদল

নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক জার্মানি

শনিবার বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

বিলাসবহুল বাংলোতে রণবীর-আলিয়ার সুখের সংসার

১০

খুবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ১৮ ডিসেম্বর, আসনপ্রতি লড়বেন ৯৭ জন

১১

বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অটোরিকশার ৪ যাত্রী নিহত

১২

এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কী, খরচ কেমন হতে পারে?

১৩

ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র : জেনে নিন কোন পটে কারা

১৪

শাজাহান খানের মেয়ে ঐশীর নামে দুদকের মামলা

১৫

জাবিতে চার আবাসিক হলের নাম পরিবর্তন

১৬

বিশ্বকাপের ড্র আজ : কখন, কোথায় হবে জেনে নিন

১৭

আরও ক্ষমতা বাড়ল পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের

১৮

গরম ডাল-ভাতের সঙ্গে লেবু চিপে খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর?

১৯

ফের বিতর্কে শাহরুখপুত্র

২০
X