জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন দলটির নেতাকর্মীরা। ওই দিন সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থলের মাত্র ৪০ গজ দূরে জানাজার একটি ছবি ঘিরে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এবার পুলিশকে ঘুমে রেখে ভোরেই সাঈদীর জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে চাঙ্গাভাবের জানান দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ আয়োজনের পর নেতারা বলছেন, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচি চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে সুন্দরভাবে। অন্যদিকে, নগরজুড়ে এমন আয়োজনের ব্যাপারে পুলিশের জানা নেই, বললেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল শুক্রবার ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানা এলাকায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। সেখানে মোনাজাত পরিচালনা করেন দলের সহকারী সেক্রেটারি ও চট্টগ্রাম মহানগরের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান। বক্তব্য দেন মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এফএম ইউনুস, সাংগঠনিক সেক্রেটারি, সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালীসহ থানা পর্যায়ের নেতারা। তা ছাড়া অন্য থানা এলাকায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, চকবাজার থানা আমির একে আনোয়ার, সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুল হান্নান, চান্দগাঁও থানা দক্ষিণের আমির আবু ইশমাম, সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার, অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, মাওলানা মোহাম্মদ ফেরদৌস, আমির এমএ গফুর, এম হোসাইন, আলী আকবর চৌধুরী, মাওলানা আবুল মনসুর, সুলতান আহমদ প্রমুখ। তবে থানা পুলিশ বলছে, জামায়াতের এ ধরনের দোয়া মাহফিল কিংবা কর্মসূচির কথা জানা নেই পুলিশের।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একটি সূত্রে জানা গেছে, ওয়াসার মোড়ে সাঈদীর গায়েবানা জানাজা কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। যেখানে চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের শীর্ষ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহানসহ অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ৩৫০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে আটক ৪০ জনকে আসামি দেখানো হয়েছে। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে ফজরের নামাজের পরপরই কেন্দ্রঘোষিত দোয়া মাহফিল পালন করেছে সংগঠনটি।
দোয়া মাহফিলের ব্যানার ও বক্তাদের কয়েকটি ছবি কালবেলার হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, একটি রুমে মাথায় টুপি ও পাঞ্জাবি পরে বসে আছেন কিছু মুসল্লি। সেখানে জামায়াতের নেতারা বক্তব্য রাখছেন। আরেকটি ছবিতে মোনাজাত করছেন নেতাকর্মীরা। ছবিগুলো গতকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পরে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর এ নিয়ে সিএমপির গোয়েন্দা শাখাসহ চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। কীভাবে সবার চোখ এড়িয়ে এমন কর্মসূচি পালন করেছে, তা নিয়ে চলছে জোরালো আলোচনা। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা।
এ বিষয়ে সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি পশ্চিম) মো. জসিম উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, ‘জামায়াতের নেতাকর্মীরা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে? কোথায় করল? এ রকম কোনো কিছু তো আমার জানা নেই।’
পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রোজিনা খাতুন বলেন, স্যার (ওসি) বাইরে আছেন। তার থানা এলাকায় জামায়াত কর্মসূচি পালন করেছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি জানি না। আমার জানামতে হয়নি।
চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন নেতা কালবেলাকে বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী সকালে (শুক্রবার) দোয়া মাহফিল পালন হয়েছে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় ঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সুন্দরভাবে পালিত হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রচার সম্পাদক এএইচএম কামাল কালবেলাকে বলেন, বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দোয়া কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত। এ ছাড়া নগরীর শত শত মসজিদে জুমার নামাজ শেষে আল্লামা সাঈদীর মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। তিনি বলেন, শুধু পাহাড়তলী নয়, চকবাজার, চান্দগাঁও থানা দক্ষিণ, চকবাজার, কোতোয়ালি থানা উত্তর, পাঁচলাইশ, ডবলমুরিং, সদরঘাট, পতেঙ্গা, আকবার শাহ, বাকলিয়া, বায়েজিদ, ইপিজেডসহ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে পৃথকভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মন্তব্য করুন