উদীয়মান অর্থনীতির পাঁচ দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত জোট ‘ব্রিকস’-এর এবারের সম্মেলন ঘিরে সবার বেশ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে জোটের ১৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ভ্লাদিমির পুতিন বাদে বাকি দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। এর আগে জোটের ১৪টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এবারের এ সম্মেলন ঘিরে এত বেশি আলোচনা কখনো হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কী কারণে সবার এত আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবারের এ সম্মেলন ঘিরে।
উপরের পাঁচটি দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ব্রিকস নামক এই আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক সংগঠনের নামকরণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে ব্রিকস যাত্রা শুরু করে। ২০১৪ সালে ব্রিকস নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক নামে একটি ব্যাংক চালু করে। উদ্যোক্তা পাঁচটি ব্রিকস দেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৩২১ কোটি। অর্থাৎ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৪২ শতাংশ। জনসংখ্যা, আয়তন এবং জিডিপির ভিত্তিতে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন বিশ্বের প্রথম ১০টি দেশের অন্তর্ভুক্ত। ব্রিকসের পাঁচটি দেশই জি-২০-এরও সদস্য রাষ্ট্র। অর্থাৎ বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এই পাঁচ দেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের একচেটিয়া আধিপত্য নষ্ট করে দিতে পারে। তাদের এ আশঙ্কাকে আরও সত্যি মনে করা হচ্ছে এ কারণে যে, ইতোমধ্যে ২৫টি দেশ ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
দুদিন পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলন ঘিরে আলোচনার প্রথম কারণ হচ্ছে, কভিড-পরবর্তী সময়ে এই প্রথমবারের মতো সশরীরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ছাড়া বাকি চার দেশের শীর্ষ নেতারা এতে উপস্থিত থাকেবন। দ্বিতীয়ত, এবারের সম্মেলনে বেশ কিছু দেশকে জোটের সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়াসহ প্রায় সাতটি নতুন দেশকে এবার সদস্য করার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি দেশগুলোকে খুব দ্রুত সদস্য করে নেওয়া হবে।
আর সেটি যদি হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠার পর এটিই জোটটির সবচেয়ে বড় এক অর্জন হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে গত জুনে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে বিশ্বব্যবস্থার এক নতুন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়া হয়। জিম’ও নেইল নামে এক প্রখ্যাত ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছিলেন, ‘ভারত, চীন, ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা হলো বর্তমান বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতির দেশ, যারা সম্মিলিতভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে আধিপত্য কায়েম করবে।’ অবশ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে জোটের বেশ ধীরগতির পথচলা নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুন আবহ তৈরি করেছে ব্রিকস। একটা গা-ঝাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে জোটের ভেতরে। রাশিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, এখন আর পাঁচটি দেশ নিয়ে পড়ে থাকতে রাজি নয় ব্রিকস। নতুন নতুন সদস্য আর পরিবর্তিত চিন্তাধারার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় হয়েছে ব্রিকসের। সময় হয়েছে যুক্তরাস্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দেওয়ার। সাউথ সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক কার্লোস মারিয়া কোরেয়া গত বুধবার সিনহুয়াকে বলেছেন, মনে হচ্ছে এবারের ব্রিকস সম্মেলন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মারবে। চ্যালেঞ্জ জানাবে ডলারের একাধিপত্যকেও। এরকম পরিস্থিতিতে তাই সবার নজর এখন আসন্ন ব্রিকস সম্মেলনে।
মন্তব্য করুন