ভারতের বড় শহরগুলোয় জেন-জি তরুণদের কাছে নকল বিয়ে একটি জনপ্রিয় নতুন ট্রেন্ড হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আসল বিয়ের মতো জমকালো সাজসজ্জা, খাবার-দাবার, নাচ-গানের আয়োজন করা হলেও সেখানে আসলে কোনো বিয়ে হয় না। মূলত এটি একটি ‘থিম পার্টি’ যেখানে বিয়ে ছাড়া বিয়ের সব আয়োজনের আমেজ উপভোগ করেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
যারা দীর্ঘদিন গ্রামের বাড়িতে যান না এবং এ ধরনের পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলো মিস করেন, তাদের জন্য ভারতের কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এ ধরনের নকল বিয়ের আয়োজন শুরু করেছে।
এ ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে টিকিট কেটে লোকজনকে অংশ নিতে হয়। টিকিটের দাম দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।
টিকিট কেটে ঢুকেই বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়। এখানে কোনো ধরনের চাপ নেই, আত্মীয়-স্বজনরা কে কী বলবে, সেই চিন্তা নেই। অর্থাৎ আপনি নিজের মতো সময় কাটাতে পারবেন।
অবশ্যই এটি ভিন্ন একটি অভিজ্ঞতা, বলছেন অনেকেই। আমরা যখন পরিবারের সঙ্গে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে যাই তখন আমাদের অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। ঠিকঠাক মতো জামাকাপড় পরতে হয়, আত্মীয়রা কে কী মন্তব্য করল সেটা খেয়াল করতে হয়। কিন্তু এখানে ওসব ঝামেলা নেই। কারও মন্তেব্যের ধার না ধরে নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরে ঘোরা যায় এ নকল বিয়েতে।
ভারতে বিয়ের সাজসজ্জা, কেনাকাটাসহ বিয়ে সংক্রান্ত এই শিল্পের আকার প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কিন্তু বর্ষাসহ কিছু মৌসুমে বিয়ের আয়োজন কম হয়। তাই এই সময়ে বাজার চাঙ্গা রাখতে ভিন্নধর্মী এই নকল বিয়ের আয়োজন শুরু করেছে কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
এ ধরনের একটি কোম্পানির এক পরিচালক বলেন, মন্দা মৌসুমেও তো আমাদের ভেন্যুর ভাড়া, খাবার খরচ এবং সবই বহন করতে হয়। তাই ১০ লাখ টাকা খরচ করে হলেও এমন আয়োজন আমাদের জন্য কিছুটা হলেও লাভজনক।
এসব নকল বিয়েকে উপলক্ষ করে মেহেদি অনুষ্ঠান, গান-বাজনার আয়োজনও করা হয়। বিয়েতে নাচার জন্য বন্ধু-বান্ধবরা মিলে পেশাদার কোরিওগ্রাফারের কাছে গিয়ে নাচও শিখছে।
এটা এখন ভারতের একটি ভাইরাল ট্রেন্ড। বিশেষ করে তরুণরা এখানে জমকালো পোশাক পরার সুযোগ পায়, যেগুলো সাধারণত তারা অন্য কোথাও পরে না। এসব আয়োজনে অংশ নিয়ে তারা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের জন্য ছবি, ভিডিও বানাচ্ছে।
তা ছাড়া এসব আয়োজন যেহেতু বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয় তাই সব বয়সী তরুণের কথা বিবেচনা করেই এই আয়োজন করা হয়। এখানে বিয়ের পরে বর-কনে বাড়ি ফিরে যাবে এমন কোনো ব্যাপারও নেই। তাই সারারাত ধরেই পার্টি চলতে থাকে।
এসব নকল বিয়েতে অংশ নেওয়া তরুণ-তরুণীরা জানান, আত্মীয়-স্বজনের বিয়েতে যাওয়ার চেয়ে তারা এ ধরনের অনুষ্ঠানে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কারণ কবে বিয়ে করছো, ক্যারিয়ার প্ল্যান কী এসব বিষয় নিয়ে কেউ এখানে কোনো প্রশ্ন করে না। আবার বিয়ের পুরো আমেজটাও উপভোগ করা যায়।
আবার সব বিয়ে একইভাবে আয়োজও করা হয়না। প্রতিটি বিয়ের অয়োজনে থাকে ভিন্নতা।
এ ধরনের বিয়ে অনুষ্ঠানের সমালোচনাও হচ্ছে। অনেকে মনে করেন, এতে ভারতীয় বিয়ে ও সংস্কৃতি নিয়ে মজা করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন