রাজকুমার নন্দী
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪১ এএম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৭:২৮ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতিকে সমর্থন করে না বিএনপি

স্থায়ী কমিটির বৈঠক
‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতিকে সমর্থন করে না বিএনপি

দেশজুড়ে চলমান ‘নৈরাজ্যকর’ পরিস্থিতিকে সমর্থন করছে না বিএনপি। দলটি মনে করে, গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পরে এসে এই ধরনের ঘটনা ঘটার সুযোগ নেই। এটাকে নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন তারা। বিএনপি নেতাদের অভিমত, দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই এই সরকারকে কঠোর হাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। এ ইস্যুতে আগামী সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজেদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে বিএনপি।

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুক্তরাষ্ট্রে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে ৯ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরলে তার নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এই সাক্ষাৎ করতে পারে দলটি।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে এমন আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এসব ঘটনায় কাউকে সরাসরি দোষারোপ করবে না বিএনপি। এই ইস্যুতে কোনো কর্মসূচিও দেবে না। কিন্তু বিষয়টিকে যে তারা সমর্থন করে না, সেটি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরবে দলটি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারা দেশে ভাঙচুরের ঘটনা, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি দেশজুড়ে সংঘটিত ভাঙচুরের ঘটনাগুলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। একই সঙ্গে এটাকে এক ধরনের ফাঁদ হিসেবেও দেখছেন তারা। তাই নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা-হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়ার জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা তৃণমূলে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোনো বিরোধী পক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ম্যুরাল ভাঙচুরসহ কোনো হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা যেন কোনো ধরনের জড়িত না হয়। আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে এ নির্দেশনা দলের প্রত্যেক নেতাকর্মী অক্ষর অক্ষরে পালন করবে।

বিএনপি নেতারা মনে করেন, গণঅভ্যুত্থানের এতদিন পর দেশজুড়ে এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মূল টার্গেট হচ্ছে বিএনপি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন। একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে ছাত্ররা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। উদ্দেশ্য, নির্বাচন প্রলম্বিত করা, যাতে দ্রুততম সময়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হয়। কারণ ছাত্ররা নতুন দল গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে সারা দেশে সংগঠনকে সুসংহত করতে যথেষ্ট সময় চায়। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। নির্বাচন দিতে দেশি-বিদেশি চাপও বাড়ছে। এমন অবস্থায় নির্বাচন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপি।

বৈঠকে বিএনপির এক নেতা বলেন, একটি দেশে বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান হওয়ার পরপরই নানা ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এতদিন পরে এসে কেন হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটবে। এতদিনেও দেশ কি স্থিতিশীল হবে না? এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলতে পারে না।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা দেশবাসীকে ধৈর্য ধারণ করা এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা যাতে বজায় থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারকেও কঠোর হস্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানাই, যাতে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ কেউ না পায়।

তিনি আরও বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যাতে দেশ ও সরকারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং ষড়যন্ত্র সৃষ্টির কোনো সুযোগ না পায়, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। বর্তমান অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে সরকারের অগ্রাধিকার।

জানা গেছে, বৈঠকে দ্রুত নির্বাচন দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে আছে বিভাগীয় সমাবেশ ও জেলায় জেলায় সমাবেশ। এই ইস্যুতে রমজানের আগেই কর্মসূচি পালিত হবে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। বিএনপি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চায়। এ বছরের জুলাই-আগস্টেও নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলে মনে করে দলটি। মূলত নির্বাচন দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে বিএনপি।

দলটি মনে করে, চলমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের যে লক্ষ্য, সেটি পূরণ হবে না। ন্যূনতম সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাই এ সরকারের লক্ষ্য; এক দশক ধরে যে ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশ হয়নি। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশে ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচন, ২০১৮ সালে রাতের নির্বাচন এবং ২০২৪ সালে ডামি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে; যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারেনি কিংবা দেয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ এখন ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে দাবি বিএনপির।

বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামীকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলে আরও থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও সেলিমা রহমান। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

গাজায় যেভাবে দুর্ভিক্ষ নেমে এলো

লেভান্তের মাঠে বার্সার রোমাঞ্চকর জয়

যুবদল নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

আকিজ গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়াও থাকবে নানা সুবিধা 

বাগেরহাটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করছে ভারত

২৪ আগস্ট : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জনগণ বিএনপিকে বিজয়ী করবে : মোমিন

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় কলেজছাত্রীর কাণ্ড

১০

রোববার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১১

২৪ আগস্ট : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

সাতসকালে দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনা, বাসে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদ নেতা

১৩

তামাকবিরোধী ইয়ুথ মার্চ  / তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাতিল, দ্রুত আইন পাসের আহ্বান

১৪

দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সিট পেয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে : ফজলুর রহমান

১৫

নেতাকর্মীদের ধৈর্যশীল আচরণের আহ্বান আমিনুল হকের 

১৬

বাংলাদেশ হবে বসবাস ও বিনিয়োগের স্বর্গ: আব্দুল মুক্তাদির

১৭

ঢাকায় অ্যাপোলো ক্লিনিকের যাত্রা শুরু

১৮

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামকে দেখতে হাসপাতালে ডা. রফিক

১৯

একাত্তরের ইস্যুর সমাধান চাইল এনসিপি

২০
X