‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’ স্লোগানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরিয়ে নতুন ছাত্রসংগঠন গঠন করতে যাচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের একটি অংশ। সংগঠনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বাইরে এসে নিজেদের কর্মসূচি অনুযায়ী সংগঠন পরিচালনা করবে।
সংগঠনটির উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সংগঠনের আত্মপ্রকাশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন সংগঠনের নাম ও কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষার্থীদের জনমত জরিপের ভিত্তিতেই এই নাম নির্ধারণ করা হবে বলে জানান তারা।
সংগঠনটির নেতৃত্বে ছয়জনের নাম আলোচনায় আছে। তারা হলেন সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, জাহিদ আহসান, আবু বাকের মজুমদার, রিফাত রশিদ, তাহমিদ আল মোদাচ্ছির চৌধুরী এবং রাফিয়া রেহনুমা হৃদি। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আরও দু-একজন নারী শিক্ষার্থীকে সামনের সারিতে দেখা যেতে পারে।
নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগে ছাত্র সংগঠন ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নাগরিক কমিটির নেতারা। সে অনুযায়ী তাদের পরামর্শেই গঠিত হচ্ছে এই সংগঠন। সরাসরি সামনে না এলেও উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদের সরাসরি সমর্থন রয়েছে নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠায়।
সংগঠনটি মূলত বিলুপ্ত ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আদলেই পরিচালিত হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর আত্মপ্রকাশ করেছিল ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’। ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন আহ্বায়ক, উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ছিলেন এই সংগঠনের সদস্য সচিব আর আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ছিলেন এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের অনেকেই ছিলেন ছাত্র শক্তির সদস্য। পরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এটি বিলুপ্ত করা হয়। তারা কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চর্চা না করে স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। নতুন ছাত্র সংগঠনও গঠিত হচ্ছে একই ধারায়।
নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনে কিছু মৌলিক প্রস্তাবনা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধীর নেতারা। প্রস্তাবনাগুলো হলো আদর্শিক বাইনারির কালচারাল দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে মধ্যমপন্থি ছাত্ররাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করা; জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা, যেখানে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না; জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানই হবে মূল ভিত্তি; মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে সেটিকে অ্যাড্রেস করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করা; শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি; বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে এবং ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৯০, ২৪-এর সব গণআন্দোলন এবং ছাত্রজনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ছাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের কালবেলাকে বলেন, যারা এই সংগঠনে সদস্য হবেন কিংবা পদ পাবেন তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে পদত্যাগ করবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সহসমন্বয়ক আবু সাঈদ কালবেলাকে বলেন, ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছে এবং যে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে আমাদের এই উদ্যোগ।
এ উপলক্ষে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে নতুন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে থেকে জানানো হয়, নতুন ছাত্রসংগঠন তৈরির লক্ষ্যে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে।
সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ সাপেক্ষে সংগঠনটির সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।