বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, তর্কবিতর্ক করতে গিয়ে দেশে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয়, যাতে স্বৈরাচার হোক কিংবা দেশের ভালো যারা চায় না, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে অনুষ্ঠিত খুলনা মহানগর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, সংস্কার নিয়ে যদি আমরা অযাচিত আলোচনা করতে থাকি, তাহলে রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলো আড়াল হয়ে যেতে পারে। সংস্কার নিয়ে অযাচিত আলোচনা না করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারী উন্নয়ন, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য খাতে কী কী কাজ করবে তা উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, অতীতে দেশের গণতন্ত্র কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা সবাই জানেন। দেশের মানুষকে কীভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, সবাই জানেন। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে হারাতে হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এসব বিষয়ে নজর দেওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। গণতন্ত্র যত প্র্যাক্টিস হবে তত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এ কারণেই বিএনপি দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতা নির্বাচিত করছে।
এ সময় তিনি সরকারকে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধের দিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, আমি ১৬ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে বাস করছি। আমরা ৩১ দফা ঘোষণা করেছি। তার একটি হলো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। আমরা যুক্তরাজ্যের এনএইচএসের আদলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেওয়ার উদ্যোগ নেব। অর্থাৎ একজন মানুষের চিকিৎসার দায় রাষ্ট্র নেবে। এরকম একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আমরাও নিতে চাই।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার সরকার আমাদের এমন এক জায়গায় রেখে গেছে, যেখানে লুটপাট করে ধ্বংস করে গেছে। আমরা সংস্কার নিয়ে প্রতিনিয়ত অবান্তর আলোচনা করলে মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা এখনো সফল হতে পারিনি। দেশকে গড়ে তুলতে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হলে অসমাপ্ত কাজগুলো করতে হবে। খালেদা জিয়ার সৈনিকরা সেটি পালন করবে এ প্রত্যাশা করছি। কেননা, আজকে দেশে একটি সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। আমরা যাতে দায়িত্ব পেলে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারি, সেটাই হোক আমাদের শপথ।
তারেক রহমান বলেন, যে কোনো মূল্যে জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ দেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক হলেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়া তা অব্যাহত রেখেছেন। ইনশাআল্লাহ জনগণ আমাদের আবারও সুযোগ দেবে। বিএনপি সুযোগ পেলে মূল লক্ষ্য হবে দেশ ও জনগণের অবস্থার পরিবর্তন করা। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
সম্মেলনে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান। এ সময় নেতাকর্মীরাও হাত উঠিয়ে ধানের শীষে ভোটের প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সম্মেলন শুরু হয়। খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে রংবেরঙয়ের ক্যাপ ও টিশার্ট পরে প্ল্যাকার্ড হাতে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনিন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, শামীমুল ইসলাম শামীম, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, বিএনপি নেতা সৈয়দা নার্গিস আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, কাজী মিজানুর রহমান, কে এম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, শেখ মোহাম্মদ আলী বাবু ও মুর্শিদ কামাল। সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পড়ে শোনান মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। শোক প্রস্তাব পড়ে শোনান সৈয়দা রেহানা ঈসা। সম্মেলনে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য যা ইচ্ছা তাই করেছেন। কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরের আহ্বান জানান।
বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন। সম্মেলনে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদে প্রার্থী ১২ জন। ভোটার ৫০৫ জন। এর আগে খুলনা মহানগর বিএনপির সবশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর। আর ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর গঠিত হয়েছিল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।
তারেক রহমানের উপহার পেল নিহত ১১ নেতাকর্মীর পরিবার: বিগত সরকারের আমলে যশোরের মনিরামপুরে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নিহত ১১ নেতাকর্মীর পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া উপহার বিতরণ করা হয়েছে। নিহত ১১ নেতাকর্মী হলেন কাশিপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মেজবাহুর রহমান চন্টু, চিনাটোলার আশিকুর রহমান, জয়পুরের বজলুর রহমান, আবু সাঈদ, আনিচুর রহমান, বিপ্রোকোনার মতিয়ার রহমান, চাপাকোনার আসাদুজ্জামান, মাছনার হাফিজুর রহমান, তাহেরপুরের ইউসুফ আলী, দুর্গাপুরের আতিয়ার রহমান ও লাউড়ি গ্রামের আনিছুর রহমান।
সোমবার সন্ধ্যায় মনিরামপুর প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ নিহতদের পরিবারের মধ্যে বিতরণ করেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক খান শফিয়ার রহমান। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মনিরামপুর প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য একে এম নিছার উদ্দিন খান আযম, সভাপতি এস এম মজনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সোহান, পৌর বিএনপির সহসভাপতি একে আজাদ, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ, সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোক্তার হোসেন, আইয়ুব আলী, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আব্বাস উদ্দিন, বিল্লাল হোসেন, উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম, পৌর কৃষক দলের আহ্বায়ক মোস্তফা আনোয়ার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন