চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন—ডোয়াইন ব্রাভোর জনপ্রিয় গানটি এবার রোহিত শর্মার দলের জন্য আবারও বাজানো যাক। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তৃতীয় শিরোপা জিতেছে তার দল। দুবাইয় পঁচিশ হাজার দর্শককে সাক্ষী রেখেই শিরোপা উল্লাসে মেতেছেন রোহিত-বিরাট কোহলিরা। পেন্ডুলামের মতো হেলতে থাকা ম্যাচ শেষ দিকে ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তখনো গ্যালারিতে থাকা প্রায় পঁচিশ হাজার দর্শক ঠায় দাঁড়িয়ে। কখন জয়সূচক শটটি খেলবেন রবীন্দ্র জাদেজা কিংবা লোকেশ রাহুল। এমন ভাবনার মধ্যেই ৪৯তম ওভারের শেষ বলটা কিছুটা টেনে নিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাঝ মাঠে ব্যাট উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন জাদেজা। দৌড়ে এসে জাদেজাকে জড়িয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন অন্য প্রান্তে থাকা রাহুল। আইসিসির ফটোগ্রাফার ততক্ষণে ড্রেসিংরুমের সামনে থেকে ভোঁ দৌড়। ছুটছেন তাদের দিকে একটা ভালো ছবির আশায়। দুবাইয়ের আকাশে তখন আতশবাজির জ্বলমলে আলোয় রাঙিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তৃতীয় শিরোপা উদযাপনে রোহিত শর্মারা। ভারতের এত উদযাপনের মাঝে অন্ধকারে হারিয়ে গেল নিউজিল্যান্ডের হতাশাচ্ছন্ন চেহারা। টানা ৫০ ওভারের চারটি টুর্নামেন্টের তিনটির ফাইনাল খেলেও শূন্য হাতেই ফিরতে হচ্ছে তাদের। দারুণ ছন্দে থাকা দল নিয়েও দুবাইয়ে শিরোপা জেতা হয়নি মিচেল স্যান্টনারের। ৫০ ওভারের আইসিসি টুর্নামেন্টে যেন শুধু দুঃখই সঙ্গী হচ্ছে কিউইদের। অন্যদিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত। অপরাজিত থেকেই শিরোপা ঘরে তুলেছে তার দল।
ম্যাচের শুরু থেকেই দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের পুরো গ্যালারি যেন নীল সমুদ্র। ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার মাঠের কোথাও যেন নেই কোনো নিউজিল্যান্ড সমর্থক। কয়েকবার খুঁজে দূরে একটা নিউজিল্যান্ডের পতাকা হাতে দু-তিনজনকে দেখা গেছে ঠিকই। কিন্তু তারা আবার নিউজিল্যান্ডের নয়। কেন উইলিয়ামসনদের সমর্থন জোগাতেই তাদের মাঠে আসা। গ্যালারির মতো মাঠেও দাপুটে ছিল ভারত। দুর্দান্ত শুরু পাওয়া কিউইদের মাঝে চেপে ধরেছিলেন কুলদীপ যাদব, বরুণ চক্রবর্তীরা। তারপরও শেষ দিকে ড্যারি মিচেল ও মিচেল ব্রেসওয়েলের চেষ্টায় আড়াইশ ছোঁয়ানো ইনিংস পায় কিউইরা। আড়াইশ নিয়েও ভারতের সঙ্গে বুকে বুক রেখে লড়াই করে গেছেন তারা। ম্যাচের প্রায় শেষ দিকে এসে ফল বুঝে নেয় ভারত। তার আগে যথেষ্ট সুযোগ তৈরি করে কিউইরা। কিন্তু ওই যে ফিল্ডিংয়ে কিছু দুর্দান্ত ক্যাচে যেমন ম্যাচে ছিল তারা, তেমনি কিছু দুর্বল ক্যাচ মিসে ম্যাচটাও হাত থেকে ফসকে গেল কিউইদের। ভারত চ্যাম্পিয়ন হলো তাই হেসে খেলেই।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে গতকাল আগে ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ড। টানা ১২ ম্যাচ টস হারের বিব্রতকর রেকর্ডকে সঙ্গী করেন রোহিত। নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৫১ রান তোলে মিচেল স্যান্টনারের দল। ভারত সেটা পেরিয়ে গেছে ৬ বল বাকি রেখে ও ৪ উইকেটে। দলকে ফাইনাল জিতিয়ে ম্যাচসেরা হন অধিনায়ক রোহিত। আর টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ পারফরম্যান্সে সেরার পুরস্কারটা মেলে কিউই অলরাউন্ডার রাচীন রবীন্দ্রর। সান্ত্বনাই বলা চলে তার জন্য। এমন ছন্দে থেকেও যে দলকে শিরোপা জেতাতে পারলেন না তিনি। ফাইনালে ভারতের স্পিন বিষে নীল হয়েছিলেন তারা। সেটাকে কাজে লাগিয়েছে ভারতীয় ব্যাটাররা। রোহিত থেকে শুরু করে শ্রেয়ার আইয়ার, রাহুল ও অক্ষর প্যাটেল—সবার দারুণ সহযোগিতায় ভারত পেয়ে যায় তৃতীয় শিরোপার ছোঁয়া। দুবাইয়ে থেকে পুরো টুর্নামেন্ট খেলল ভারত, শিরোপাটা না জিতলে সমালোচনা কম হতো না রোহিতদের। সেটা অন্তত কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন তারা। একই ভেন্যু, একই উইকেটে খেলার যে সমালোচনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে তাদের; এবার শিরোপা বুকে সেটাকে স্বার্থক ভাবতেই পারে ভারত। অন্তত সাদা বলের ক্রিকেটের শিরোপা ছুঁয়েই।
মন্তব্য করুন