অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব-সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই বলেও মনে করে দলটি। তাদের শঙ্কা, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে সেটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই সরকারকে রাজনৈতিক মতৈক্যে এমন স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ বিএনপির।
গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার ব্যাপারে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বৈঠকে সে ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিবেচনায় যে বিষয়টি নিয়ে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, মিয়ানমারে যেখানে একটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে, দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে, আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে—এমন প্রেক্ষাপটে রাখাইনে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে এবং দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিষয়টি হুমকি হবে কি হবে না, সেটি নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং এটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। কিন্তু করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী আরও দুটি শক্তিশালী দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার যথেষ্ট প্রয়োজন, অবকাশ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ব্যতিরেকে এটি করলে, তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই চরম স্পর্শকাতর এমন একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বৈঠকে বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই ইস্যুতে তারা তাদের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে, সেগুলো নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে জাতির সামনে পুরো বিষয়টি তুলে ধরবে। পাশাপাশি সেখানে জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের যে এ ধরনের একটা স্পর্শকাতর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই, সে বিষয়টিও তুলে ধরবে তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এটি শুনেছি যে, মানবিক কারণে এ করিডোর দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা কীভাবে, তা জানি না। আমরা এটাও শুনেছি যে, কিছু শর্ত আছে; কিন্তু সে শর্তগুলো কী, এগুলো জানি না। সরকারের এ বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো উচিত। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার পর দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে অবস্থান ব্যক্ত করা হবে।
মন্তব্য করুন