সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির প্রতিবাদে বাংলাদেশ সচিবালয়ে গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কর্মচারীরা। এ অধ্যাদেশকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার না হলে সচিবালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই আজ সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। গতকাল রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টায় সচিবালয়ের বাদামতলায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ২টা পর্যন্ত তারা পুরো সচিবালয়ে প্রদক্ষিণ করে মিছিল করতে থাকেন। একপর্যায়ে সচিবালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন তারা। বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের ব্যানারে এ আন্দোলন চলছে।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। রোববার সন্ধ্যায় কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও কার্যকর করে সরকার। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে কর্মচারীদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে পারবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিলের জন্য তারা আরও ৩০ কার্যদিবস সময় পাবেন।
অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এ অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। গণহারে এ অধ্যাদেশের অধীনে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই, নেওয়া হবেও না।
এদিকে এ অধ্যাদেশ বাতিল ও অন্য সমস্যা সমাধানের জন্য সচিবালয়ে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এ ফোরামে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের (নূরুল-মোজাহিদ গ্রুপ) মো. নূরুল ইসলাম এবং বাদীউল-নিজাম গ্রুপের মো. বাদীউল কবিরকে। কো-মহাসচিব হয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের মো. নজরুলর ইসলাম, সংযুক্ত পরিষদের মো. মোজাহিদুল ইসলাম ও নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সচিবালয়ের তিনটি সংগঠনের মধ্য থেকে ১০ জন করে প্রতিনিধি মনোনয়নপূর্বক বাকি পদগুলো শিগগিরই পূরণ করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে সাত সদস্যবিশিষ্ট সাব-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নবগঠিত সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, অবিলম্বে এই কালো অধ্যাদেশ বাতিল করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। না হলে সর্বাত্মক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আজ সকাল ১০টায় কর্মচারীরা সচিবালয়ে বাদামতলায় ফের সমাবেশ করবেন বলেও জানান তিনি।
আরেক কো-চেয়ারম্যান মো. বাদীউল কবির বলেন, অবিলম্বে এ কালো অধ্যাদেশ বাতিলের লক্ষ্যে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদ এগিয়ে না এলে এ আন্দোলন সারা দেশে ১৮ লাখ কর্মচারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। এরই মধ্যে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আন্দোলন চলছে। তাই কালক্ষেপণ না করে সরকারের বোধোদয় আশা করছি।
সভা-সমাবেশ নিষেধাজ্ঞা স্মরণ করালো ডিএমপি: সচিবালয়ে কর্মচারীদের আন্দোলন চলাকালে সেখানে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১০ মে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কর্তৃক জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বাংলাদেশ সচিবালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে উক্ত নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।’
মন্তব্য করুন