কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩১ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড. ইউনূসের ৭ প্রস্তাব

কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড. ইউনূসের ৭ প্রস্তাব

রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগে অংশ নিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

গতকাল সোমবার সকালে সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছান। তারপর উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে যোগ দেন তিনি। সেখানে বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ও তার রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। এ সংলাপে অংশগ্রহণ করছেন কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাব এবং বক্তব্যগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে তুলে ধরার কথা বলছে সরকার। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাসহ নিপীড়নের শিকার মিয়ানমারের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর দুর্দশা গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হবে। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া এই তিন দিনের বিশেষ অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্বেচ্ছায় ও টেকসইভাবে রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সাত দফা প্রস্তাব পেশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।

২০১৭ সালে রাখাইনে সামরিক বাহিনীর গণহত্যা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। গত দেড় বছরে নতুন করে এসেছে আরও ১ লাখ ২৪ হাজার। আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে। প্রথমটি কক্সবাজারে শুরু হয়েছে, দ্বিতীয়টি হবে ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এবং তৃতীয়টি ৬ ডিসেম্বর কাতারে।

অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কেবল কথার জালে বন্দি থাকতে পারি না। এখনই সময় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের দায় শুধু বাংলাদেশের নয়; বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও। সংকটের সমাধানে সক্রিয় ও যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও মিয়ানমারে। সবাইকে এই সংকট নিরসনে কোনো বিলম্ব ছাড়াই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনাদের সোচ্চার হওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার আশা সঞ্চার করতে পারে।’

ড. ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব: প্রথম প্রস্তাবে ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরে যেতে হবে। এ জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাব, তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে একটি বাস্তব রোডম্যাপ যত দ্রুত সম্ভব তৈরি করুন। আর সময় নষ্ট না করে এখনই কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জীবন রক্ষাকারী কাজ চলমান রাখতে দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক অংশীজনের অপিরিমিত অবদান এখানে প্রয়োজন। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার। একই সময়ে আমরা অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, ভবিষ্যতের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই অর্থায়ন করার পদক্ষেপ নিতে।

তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি সব ধরনের নিপীড়ন এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে। আমরা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং আরাকান আর্মির প্রতি আহ্বান জানাই রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার। আর কোনো রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে না আসে তা মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের অভ্যন্তর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে।

চতুর্থত, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সহিংসতা বন্ধে, জাতিগত নিপীড়ন রোধে পরামর্শ কিংবা সংলাপের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। আমরা মিয়ানমার সরকার এবং রাখাইন কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে, স্বেচ্ছায় নিরাপদ প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার।

পঞ্চমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিশেষ করে আসিয়ানকে রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। আপনাদের সবার সহযোগিতা এই সংকটের সমাপ্তি টানতে পারে। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সচল হওয়ার আহ্বান জানাই।

ষষ্ঠত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীজনকে অবশ্যই জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

সপ্তমত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আহ্বান জানাই ন্যায়বিচার, দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে এবং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে। এখনই সময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার।

এ সময় রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের নাজুক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই আমরা। আন্তর্জাতিক পরিসরে এ নিয়ে আমরা তাই তাদের দাবি তুলে ধরছি।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সহিংসতা ও বাস্তুচ্যুতির শিকার রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অঞ্চলটির অন্যান্য দেশেরও প্রশংসা করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আজ থেকে ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর

জনবল সংকটে কোটি টাকার হাসপাতাল, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত

বায়ুদূষণে শীর্ষে কিনশাসা, ঢাকার অবস্থান কত?

আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু আজ

ছেলেদের জন্য কিছু স্টাইলিশ আউটফিট কম্বিনেশন

বুয়েট শিক্ষার্থীদের ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ আজ

আর্জেন্টিনার আগেই এশিয়া সফরে আসছে ব্রাজিল, জেনে নিন ম্যাচসূচি

দুর্ভিক্ষের গাজায় পদে পদে বিপদ, নিহত আরও ৬৪

বৃষ্টিতে বাইক চালাতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি

যুবকের কাণ্ডে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ

১০

২০২৬ সালে রোজা শুরু হতে পারে যেদিন থেকে

১১

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ আবেদনের শুনানি ফের আজ

১২

সকালে উঠে ভুলেও করবেন না এই ৫ কাজ

১৩

উন্নত ও গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণা কাজী নজরুল : রিজভী

১৪

কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

১৫

সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ, কচুরিপানার নিচে মিলল লাশ

১৬

সপ্তাহের ব্যবধানে সাড়ে ৪ হাজার সেনা হারাল ইউক্রেন

১৭

অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

১৮

রাজধানীতে আজ কোথায় কোন কর্মসূচি

১৯

এসিআই-এ নিয়োগ, আবেদন করুন অনলাইনে

২০
X