প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। দুদেশের কৌশলগত পদক্ষেপ আঞ্চলিক-বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে। গতকাল সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ বাংলাদেশের সব উন্নয়নে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ফ্রান্স সহযোগিতা করতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইটসহ প্রযুক্তি খাতেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দুই দেশের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফ্রান্স চলমান ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সার্বভৌম নীতি, স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্থন প্রকাশ করেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় এবং দায়িত্বশীল আবাসিক শক্তি হিসেবে আমরা এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কাজ করব।
তিনি আরও বলেন, গত দেড় দশকে বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসনের ওপর ভিত্তি করে এই নতুন সম্পর্কের ভীত রচিত হয়। ফ্রান্স সরকার জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে যে বন্ধুত্বপূর্ণ বন্ধনের সূচনা করেছিলেন, তা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আজ বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক দিন, যা পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিকশিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোতে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির দর্শনীয় ও ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ফরাসি সরকারের আস্থা ও প্রশংসা ব্যক্ত হয়েছে। জিএসপি প্লাস প্রকল্পের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য সুবিধা বাংলাদেশের জন্য অব্যাহত রেখে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্স। তাই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি ফ্রান্সের সরকার ও সেদেশের জনগণের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
এর আগে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতির লক্ষ্যে বিশদ আলোচনা হয়েছে এবং আমরা কিছু ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী ফ্রান্স আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের কৌশলগত নিরাপত্তা অবকাঠামো নির্মাণে উন্নত ও বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় ফ্রান্সের নেতৃত্বকে স্বাগত জানাই এবং একটি টেকসই তহবিল গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট মাখোঁর আহ্বানের প্রশংসা করি। এ ছাড়াও বৈঠকে শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিনিময় নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে গতকাল সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মাখোঁ। পরে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে গত রোববার রাতে ঢাকায় আসেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। বিমানবন্দরে মাখোঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন