ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ব্যস্ততম সড়ক। সড়ক ঘেঁষেই ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক বটতলা। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই সড়কের ওপরই নির্মাণ শুরু হয়েছিল একটি জাদুঘর। দুইপাশ এবং সড়কের মাঝ বরাবর পিলারও তৈরি হয়েছিল। একতলার ছাদও সম্পূর্ণ। এরপর পেরিয়ে গেছে ১৫ বছর। শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। উল্টো এখন সেই জাদুঘর মেডিকেলে আসা মানুষের কাছে বিষফোড়া। সড়কের মাঝ বরাবর বড় পিলার থাকায় সব সময় লেগে থাকে যানজট। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভবনটিও। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে এটির অবস্থান। এর পরও ১৫ বছরে নির্মাণ শেষ হয়নি এই স্থাপনার। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই ছুটে আসবে। মানুষ মরবে। এরপর আলোচনায় আসবে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি।
শুধু স্মৃতি জাদুঘরটিই নয়, এমন অনেক স্থাপনা এবং নির্মাণাধীন ভবন রয়েছে ডিএসসিসির। বছরের পর বছর পার হলেও কর্তৃপক্ষ এসব নিয়ে ভাবছে না। যদিও এসব স্থাপনার পেছনে ব্যয় হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকাদার কাজ না করেই তুলে নিয়েছে বিল। কাজ শেষ না হওয়ায় অনেক স্থাপনা যেমন ঝুঁকির মধ্যে, আবার অনেক স্থাপনার মেশিনপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায়।
পশু জবাইখানা চালু হয়নি, চার বছর আগে বিদেশ থেকে আনা হয় যন্ত্রপাতি: নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত মাংস নিশ্চিত করতে হাজারীবাগে আধুনিক পশু জবাইখানা নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি। পাঁচতলা ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয় প্রায় বছর দেড়েক আগে। যদিও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। ওই বছরের জানুয়ারিতে প্রায় ৭৪ কোটি টাকার পশু জবাই যন্ত্র আমদানি করা হয়। সজীব করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান এসব যন্ত্রাংশ আমদানির টেন্ডার পায়। তবে এখনো চালু হয়নি পশু জবাইখানা।
দীর্ঘদিন ধরে এসব যন্ত্রাংশ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় বিকল হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৌশলীরা। তারা বলছেন, নিয়মানুযায়ী ভবন নির্মাণ শেষে এসব মেশিনারিজ আমদানি করতে হয়। কারণ, দীর্ঘদিন ফেলে রাখলে যন্ত্র বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর বাইরে নির্দিষ্ট মেয়াদও রয়েছে যন্ত্রের, তাও দ্রুত শেষ হবে। কিন্তু ভবন নির্মাণের আগেই কেন এসব মেশিনারিজ আমদানির টেন্ডার করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একই অবস্থা কাপ্তানবাজার আধুনিক পশু জবাইখানার ক্ষেত্রেও। সেটির জন্যও ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকার যন্ত্র কেনা হয়েছে। দুটি জবাইখানার জন্য নেওয়া প্রকল্পে মোট ব্যয় ১৩৩ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাইনি। শিগগির পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। দেশের মধ্যে এটি একটি নতুন ব্যবস্থাপনা। আধুনিক পদ্ধতিতে মাংস কাটা থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াজাত করতে যারা অংশীজন, তাদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছি।
ওসমানী উদ্যান এখন ঝোপঝাড়:
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের পরে বলা হয়েছিল ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নের কাজ শেষ হবে ১০ মাসের মধ্যে। ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেছিলেন, নগরবাসী এই উদ্যানে গিয়ে রাগ কমাবেন। তাই তিনি এর নাম দিয়েছিলেন ‘গোস্বা নিবারণী পার্ক’। তবে ছয় বছর হতে চললেও কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় অসমাপ্ত অবকাঠামোর আশপাশে তৈরি হয়েছে জঙ্গল। পানি জমে সেখানে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গাছপালা কেটে রাখা হয়েছে, পাশাপাশি ঝোপঝাড়ে বসে ভবঘুরের আড্ডা।
তিনটি ভাগে একই ঠিকাদারকে প্রায় ৯০ কোটি টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। একটি ভাগের কাজও এখনো শতভাগ শেষ হয়নি। দক্ষিণ সিটি
সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫৪ কোটি টাকার কাজ করেছে। এর মধ্যে বিল দেওয়া হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। গাফিলতির জন্য সেই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে দক্ষিণ সিটি। এর পরও এক বছর পার হয়েছে। নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া এগোয়নি। যদিও সংস্থাটির সিইওর দাবি, দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ করায় তা বাতিল করা হয়। অসম্পূর্ণ কাজের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘর এখন বিষফোড়া:
১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটকের উল্টো দিকে ‘ঊনসত্তর’ নামে দ্বিতল একটি জাদুঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এখানে ঊনসত্তরের শহীদ মতিউর রহমান, আসাদুজ্জামান, সার্জেন্ট জহুরুল হক, সামসুজ্জোহাসহ নাম না জানা শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণের কাজ দেয় সিটি করপোরেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২০ জানুয়ারি এ কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনকার উপাচার্য এস এম এ ফায়েজ। এক বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১৫ বছর পার হলেও শেষ হয়নি। সরেজমিন গিয়ে এই জাদুঘরের নামফলকটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাস্তার দুপাশে চারটি করে সিঁড়ি যুক্ত করা স্থানে রয়েছে অবৈধ দোকানপাট। একতলা সমান অবকাঠামো পথচারীদের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাদুঘরের নিচেই খাবারের দোকান বসিয়েছেন আক্কাচ আলী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ। নিচে ব্যবসা করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করছি। জাদুঘরের স্থপতি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য অনুষদের সাবেক ডিন নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৬৯ বাঙালি জাতির জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আমি অনেক যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে এর নকশা করেছিলাম। আমার জীবনের সেরা কাজ ছিল এটি। দোতলা এই জাদুঘরে শহীদদের স্মৃতি, তাদের ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র, ওই সময়ের সব স্মৃতি থাকার কথা ছিল। এক বছরের মধ্যে জাদুঘরটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ আজও শেষ হয়নি। আমার প্রচণ্ড খারাপ লাগে।
পান্থকুঞ্জ পার্ক অপরাধীদের আস্তানা, গচ্চা গেছে ৫ কোটি টাকা:
২০১৮ সালে ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে পান্থকুঞ্জের উন্নয়ন কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। চারদিকে টিন দিয়ে পার্কটি ঘেরার কয়েকদিন পরই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পার্কের ২০ ফুটের মতো জায়গা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জানায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। খুঁটি বসানোর কথা থাকলেও ৫ বছরেও বসেনি কোনো খুঁটি। আটকে আছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। গত বছর নতুন নকশা করা হয়েছে। নতুন নকশায় পার্কে রোমানিয়ান স্থাপত্যের আদলে একটি প্লাজা, বসার জায়গা, ওয়াকওয়ে, ফুলবাগান, শিশুদের খেলার স্থান রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে পুরোনো নকশায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৫ শতাংশ কাজ হয়েছিল। এতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়। এ অর্থের হিসাব কেউ দিতে পারছেন না। সরেজমিন দেখা যায়, পার্কের পশ্চিম পাশের কিছু অংশ টিন দিয়ে ঘেরা থাকলেও তা ভেঙে হেলে পড়েছে। ফুটপাতে হকার ও অস্থায়ী দোকান। রয়েছে ভাসমান মানুষদের বসতি। পার্কের মধ্যে ঝোপজঙ্গল আর ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। দুর্গন্ধে পথচারীরা নাক-মুখ ঢেকে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।
ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের কালবেলাকে বলেন, ‘পান্থকুঞ্জ পার্কে কাজ শুরুর আগে নকশা তৈরি করা হয়েছিল। তবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে বাধা এসেছে। পার্কটির নতুন নকশা তৈরি করা হয়েছে।’
চানখাঁরপুল ও কাপ্তানবাজার মার্কেটের কাজ শেষ হয়নি ৬ বছরেও:
পুরান ঢাকার চানখাঁরপুল ও কাপ্তানবাজারে দুটি বহুতল মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসসিসি। ২০১৭ সালের শেষদিকে শুরু হয়ে দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬ বছরেও বেজমেন্টের কাজও শেষ হয়নি। দোকান বরাদ্দ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কাজ দেওয়া হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। নির্মাণকাজে এমন ধীরগতির কারণে বিপাকে পড়েছেন দোকান বরাদ্দ পাওয়া ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ, এই দুটি মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে তো দূরের কথা, অতিরিক্ত চার বছরেও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদার।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মার্কেট দুটি নির্মাণে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা কাজে গাফিলতি করেছে। এজন্য বাতিল করা হয়েছে তাদের কার্যাদেশ। নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগে কাজ চলছে। কিন্তু ঠিক কবে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে বা নির্মাণকাজ শুরু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চানখাঁরপুল মার্কেটের নকশা অনুযায়ী ১২ তলা ভিত্তির ওপর ৬ তলা ভবন হবে। ২৮১টি দোকান থাকবে। প্রতিটি দোকানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে আয়তনভেদে ১১ থেকে ১২ লাখ টাকা। তখন মার্কেটটির নির্মাণব্যয় ধরা হয় ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। চার কিস্তিতে গ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে ডিএসসিসি। আর ঠিকাদারও করপোরেশন থেকে বিল তুলেছে ১৩ কোটি টাকা। কিন্তু তারা তুলে নেওয়া বিলের সমপরিমাণ কাজ করেনি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, চানখাঁরপুল মার্কেটের চারপাশ টিন দিয়ে ঘেরা। কিন্তু ভেতরে কোনো নির্মাণশ্রমিক বা সামগ্রী নেই। সেখানে রিকশা-ভ্যানের গ্যারেজ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর ড. ওমর বিন আজিজ তামিমের অনুসারী আলমগীর হোসেন। বেজমেন্টে রিকশা-ভ্যান রেখে মাসে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছেন তিনি। বেজমেন্টে যেখানে-সেখানে বৃষ্টির পানি জমে আছে। সেখানে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। মার্কেটটির কোথাও কোনো সাইনবোর্ড নেই। সিটি করপোরেশনেরও কোনো দিকনির্দেশনা দেখা যায়নি।
দোকান বরাদ্দ পাওয়া হাবিবুর মোল্লা বলেন, এখন পর্যন্ত মার্কেটটির নির্মাণকাজ শুরু হয়নি। অথচ প্রায় ১২ হাজার টাকা বর্গফুট হিসেবে দোকানের দাম নেওয়া হয়েছে। এতে ১০০ বর্গফুট দোকানের জন্য দিতে হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৩-এর একজন প্রকৌশলী বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে মার্কেটটির নির্মাণকাজ করেনি; কিন্তু বিল উঠিয়ে নিয়েছে ১৩ কোটি টাকা। তাই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগে কাজ চলছে। তবে কবে ফের কাজ শুরু হবে, তা তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেননি।
এদিকে ২০১৭ সালে কাপ্তানবাজার এলাকায় একটি মার্কেট নির্মাণে আগ্রহী ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবেদন নেওয়া হয়। পরের বছর লটারির মাধ্যমে ওই মার্কেটে ৮৪২ জনকে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর চার কিস্তিতে এসব ব্যক্তির কাছ থেকে নেওয়া হয় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মার্কেটের বেজমেন্টের নির্মাণকাজই শেষ হয়নি।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বেজমেন্টসহ দোতলা ভবন নির্মাণে দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছিল ডিএসসিসি। ভবনটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ভবনের নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। এর বিনিময়ে করপোরেশন থেকে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকার বিলও তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।
সদরঘাটে ডিএসসিসির ভবন পড়ে আছে ১৬ বছর:
৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালে নির্মাণ করা অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি ভবন ১৬ বছর ধরে খালি পড়ে আছে। যদিও এটির পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। পুরান ঢাকার সদরঘাটে ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৬ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনে সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র বা কমিউনিটি সেন্টার, ব্যায়ামাগার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিপণিবিতান ইত্যাদি সুবিধা থাকার কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু এর কিছুই হয়নি। ডিএসসিসি এখন ভবনটিতে ওইসব সুবিধার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য ভবনটি নতুন করে সংস্কার ও অন্যান্য কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা।
ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ২০১৭ সালে ভবনটি ব্যবহার উপযোগী করার উদ্যোগ নেন। সংস্কারের পর ভবনটিতে ‘শেখ হাসিনা জলবায়ু উদ্বাস্তু আশ্রয়কেন্দ্র ও সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার’ নামের একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সাঈদ খোকন। এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় সাজেদা ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণের পর ১৬ বছরের মধ্যে এক বছরের মতো ভবনটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের দ্বিতীয় তলার কিছু অংশ সিটি করপোরেশনের স্থানীয় ৩৭ নম্বর কাউন্সিলরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবনের বাকি অংশ পড়ে আছে। দরজায় তালা ঝোলানো। ভবনটির নিচতলার পশ্চিম দিকে একটি গণশৌচাগার রয়েছে, যা ব্যবহার করা হয়।
এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুর রহমান মিয়াজি কালবেলাকে বলেন, ভবনের দোতলার এক পাশে তার কার্যালয়। এর বাইরে ভবনে অন্য কোনো কার্যক্রম নেই। সিটি করপোরেশন ভবনটি সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। এ বছরের মধ্যে সামাজিক অনুষ্ঠান কেন্দ্র চালু করা হবে।
জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান কালবেলাকে বলেন, উন্নয়নকাজের বেশিরভাগ প্রকল্প অত্যধিক ব্যয়ে নেওয়া হয়। বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের বাছাই করা হয় অনেক ক্ষেত্রেই তারা যোগ্য নন। স্বজনপ্রীতি ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেককে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কাজগুলো বাস্তবায়নে সিটি করপোরেশনের যে কর্মকর্তাদের নজরদারি করার কথা, তাদের কার্যক্রমে ঘাটতি আছে। নজরদারির অভাবে দুই বছরের প্রকল্প শেষ হয় ছয়-সাত বছরে। এতে সরকারি উন্নয়নে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, কাজে গাফিলতির কারণে কোনো ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয় না। এমনকি সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না। এটা একটা সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এ কারণে জনগণের ট্যাক্সের টাকার অপচয় হচ্ছে, কোনো সুফল মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে এটা নাগরিকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন