বিএনপি মনে করে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) এ কথা পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটল। সেখানে রাষ্ট্রদূতকে পরিষ্কারভাবে এ কথা জানান ফখরুল। বৈঠকে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে উপ-রাষ্ট্রদূত বার্ন্ড স্পেনিয়ার ও ফার্স্ট সেক্রেটারি সেবাস্তিয়ান রিগার ব্রাউন উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে দলের মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূতকে বিদায় দিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। এর উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে এদেশে একটা এক্সপার্ট টিম আসবে আগামী সপ্তাহে এবং এই এক্সপার্ট টিমের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা হবে, সিভিল সোসাইটির কথা হবে। এ টিমের অ্যাডভান্সার আলোচনার ব্যাপারেই আমাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আপনারা যেটা আঁচ করছেন, নির্বাচনের ব্যাপারেই আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আমাদের কী চিন্তা, আমরা কী ভাবছি, আমরা কী করছি—এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিএনপি বলে আসছে, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে।’ এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (ইইউ) যেটা সবসময় চাচ্ছেন, অনেকবারই বলেছেন যে, তারা বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। সেটাকে আরও এক্সপ্লোর (পর্যালোচনা) করার জন্য আগামী দিনে তাদের টিম আসবে। তারা দেখবে, বাংলাদেশে আসলে কোনো সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করার সুযোগ আছে কি না। ওই টিমের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য এখানে যে রাষ্ট্রদূত আছেন, তিনি এসেছিলেন।’
ইইউ রাষ্ট্রদূতের কাছে বিএনপির বক্তব্য কী ছিল—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি, এখানে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।’
বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার চাইলেও সে দাবি মানতে নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুপক্ষের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে সমঝোতার জন্য সংলাপ আয়োজনের কথাও উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতায় সংলাপের সম্ভাবনা আছে কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনই কোনো কথা বলতে পারব না। কারণ, সে ধরনের কোনো আলোচনা আজকে হয়নি। আলোচনাটা হয়েছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কি না; এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব কি সম্ভব নয়—সেটাই তারা জানতে চেয়েছেন।’
রাজনীতিতে বারবার ‘নির্বাচনকালীন প্রেসক্রিপশনের’ কথা আসছে। সেখানটায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো পরামর্শ আছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রেসক্রিপশনের তো প্রশ্নই উঠতে পারে না, কীসের প্রেসক্রিপশন? এখানে নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠুভাবে। বর্তমানে আওয়ামী লীগ যে অবস্থাটা তৈরি করেছে, গত দুটি নির্বাচনে এটা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রেসক্রিপশনের প্রশ্ন না, এখানে সংবিধানে আছে—ভোটাররা ভোট দেবেন, ভোট দিয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে সরকার গঠিত হবে।’
মন্তব্য করুন