ভয় পেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আরও দাবি করেন, এখন সেই ভয় আর নেই, তা অনেকটাই কেটে গেছে। এখন আমাদের অর্থনীতি বেশ স্থিতাবস্থায় আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব দাবি করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক হয়।
অর্থমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান—অর্থনীতির সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থ মন্ত্রণালয় যে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি গ্রহণ করেছে, সেটি কতদিন চলবে? জবাবে অর্থমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কোন জায়গায় অর্থনীতি খারাপ দেখছেন। আমেরিকার মতো দেশে তিনটি ব্যাংকের পতন হয়েছে। এতেই বোঝা যায় পৃথিবীর অর্থনীতি বদলে যাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি যদি বিবেচনা করা হয়, তাহলে সেখানে আপনাদের গ্রহণ করতে হবে আমরা যা আছি, যা অর্জন করেছি, তা মাচ বেটার (অনেক ভালো)।’
অর্থমন্ত্রীর এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা জানতে চান, তাহলে আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন? জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘এই ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন-অপ্রয়োজনীয়তা তখন আমরা বুঝতে পারিনি। যুদ্ধ কয়দিন থাকবে, না থাকবে একটা শঙ্কা ছিল। তা ছাড়া যুদ্ধের প্রভাবে সে সময় যেভাবে অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল, রিজার্ভ পড়ছিল, ভোগ্য ও ব্যবহৃত জিনিস ঘাটতিতে পড়ছিল—তাতে আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমরা ভয় পেয়ে গেছি সেই দিন, যেদিন যুদ্ধটা লেগে গেল। আমরা তো এটা বুঝতে পারিনি। তখন বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদে থাকতে ঋণটা নিয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানে সে ভয় কেটে গেছে। গত বছর দেশের অর্থনীতিতে যে ভয় দেখা দিয়েছিল, বর্তমানে তা আর নেই।’এ সময় গত তিন বছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সূচক ভালো অবস্থায় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।
সংকট তো নেই, তাহলে আইএমএফ থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছে, তার কর্মসূচি থেকে সরকার সরে আসবে কি না—এমন প্রশ্নে অবশ্য অর্থমন্ত্রী চুপ থাকেন। তবে ভিন্ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ থেকে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তা শোধ করে দেওয়া কোনো ব্যাপারই নয়।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আইএমএফ আইএমএফ করেন। কিন্তু কী দিয়েছে জানেন? অনেক আলোচনা হলেও তারা যা দিয়েছে, তা মাত্র দুই মাসের রেমিট্যান্সের সমান। এটা হলো আইএমএফের ঋণ। এটা যে কোনো সময় পরিশোধ করা যাবে।’
আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তিতে ছাড় করেছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে ৩ বছরে ৭ কিস্তিতে দেবে ঋণের বাকি অর্থ।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। বর্তমানে সারাবিশ্ব মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে তা এখনো ১২ শতাংশ ক্রস করেনি।’ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমেছে।
জাইকার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। তা ছাড়া জাইকার অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতিতেও প্রতিনিধিদলটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়। আগামীতে বাজেট সহয়তা যেন বাড়ানো হয়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন