মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২
নোয়াখালী ব্যুরো
প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৬ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আ.লীগ নেতাসহ ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৬

সুবর্ণচরে ভোটের রাতে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
আ.লীগ নেতাসহ ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৬

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া মামলার বাকি ছয় আসামির যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা; অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ১৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন। বাকি এক আসামি পলাতক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, তারা শুধু ভিকটিমেরই ক্ষতি করেননি, রাষ্ট্রেরও ক্ষতি করেছেন। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না।

আসামিদের মধ্যে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন, মো. হাসান আলী বুলু, মো. সোহেল, স্বপন, ইব্রাহীম খলিল, আবুল হোসেন আবু, মো. সালাউদ্দিন, মো. জসীম উদ্দিন, মো. মুরাদ ও মো. জামাল হেঞ্জুর সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে মো. হানিফ, মো. চৌধুরী, মো. বাদশা আলম, মোশারফ, মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ও মো. সোহেলের। তাদের মধ্যে মিন্টু পলাতক।

রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) সালেহ আহমদ সোহেল খান এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট জানিয়ে বলেন, রায়টি অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২৩ সাক্ষী উপস্থাপন করে। আসামিপক্ষের পাঁচজন সাফাই সাক্ষী দেয়। কোনো সাক্ষীই ভোটকেন্দ্রে পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ায় জেরে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেনি। আসামিপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ হাওলাদার বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। বাদীপক্ষের আইনজীবী মোল্লা হাবিবুর রাসুল মামুন বলেন, যুগান্তকারী রায় হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে চল্লিশ বছরের ওই নারীকে দলবেঁধে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারী চার সন্তানের জননী। ওই নারী অভিযোগ করেন, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি তখন দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার পরদিন নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে তদন্ত শেষে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আলোচিত এ মামলার রায় কেন্দ্র করে আদালত চত্বর কঠোর নিরাপত্তায় বেষ্টিত ছিল। রায় ঘোষণার পরপরই আসামিদের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, এ ধরনের অপরাধের প্রবণতা বেড়ে গেলে এবং বিচারে আসামিরা খালাস পেলে বিচারক ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়। তাই আসামিরা বিচারকের কোনো ক্ষমা বা করুণা পেতে পারেন না। বরং তারা তাদের প্রকৃত অপরাধের সাজা পেলেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ কিংবা এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবেন।

নির্যাতনের শিকার সেই নারী রায় ঘোষণার পুরোটা সময় আদালত কক্ষের ভেতরে একটি চেয়ারে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছিলেন। রায় শোনার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সেই দিনের নির্যাতনের কথা তিনি এখনো ভুলতে পারছেন না। আদালত যে রায় দিয়েছেন, তিনি তাতে সন্তুষ্ট। তিনি দ্রুত ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানান। আসামিপক্ষ একই এলাকার হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কারও কথা জানিয়েছেন।

এদিকে রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের স্বজনরা। তারা ‘এ রায় মানি না, মানব না বলে’ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর আগে আদালতে বিচারক রায় ঘোষণা পর কাঠগড়ায় থাকা আসামিরা বলতে থাকেন, এ কেমন রায় দিলেন? ঘটনাটি মিথ্যা ছিল।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১০

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১১

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১২

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

১৩

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

১৪

অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে চিকিৎসার মান কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছায়নি : ডা. রফিক 

১৫

মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানো থালাপতির উত্থানের গল্প

১৬

চট্টগ্রামের নগরায়ণ সংকটে শহরবাসী, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন নেই

১৭

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ ক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলা, ব্যাপক গোলাগুলি

১৮

ইসরায়েলে সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা কতটুকু?

১৯

আন্দোলনের সময় ছাত্রদের নগ্ন ভিডিও করতেন তৌহিদ আফ্রিদি : আইনজীবী

২০
X