ইউসুফ আরেফিন
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:২১ এএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হতাশা ও ক্ষোভ

১৩ বছরেও পদোন্নতি নেই তথ্য ক্যাডারে

১৩ বছরেও পদোন্নতি নেই তথ্য ক্যাডারে

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পদোন্নতির দেখা পাচ্ছেন না তথ্য ক্যাডারের অনুষ্ঠান শাখার কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার বেতারের বার্তা শাখাও। অথচ ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণসহ বেতার ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এ কর্মকর্তারা। বেতার কর্মকর্তাদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশ রয়েছে। আছে প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগই নেননি সংশ্লিষ্টরা। ফলে বঞ্চিত থাকার কারণে কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের ভাষ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বেতারের যথাযথ উদ্যোগের অভাবেই তথ্য ক্যাডারের সাতটি ব্যাচের কর্মকর্তারা যোগ্য হয়েও পদোন্নতির মুখ দেখছেন না। ব্যাচগুলো হলো ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৪, ৩৫ এবং ৩৬। অথচ পুলিশ, প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিয়মিতই পদোন্নতির সুফল ভোগ করছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৯ ব্যাচের কর্মকর্তারা গত বছরের অক্টোবরে পদোন্নতি পেয়ে উপসচিব হয়েছেন। ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তারা কিছুদিনের মধ্যেই উপসচিব হবেন। কিন্তু ২৯তম ব্যাচের তথ্য ক্যাডারের (অনুষ্ঠান) কর্মকর্তারা এখনো প্রথম পদোন্নতিও পাননি। তারা নবম গ্রেডে অর্থাৎ এন্ট্রি পদেই রয়েছেন। চাকরির একযুগ শেষ করেও পদোন্নতি পাননি। সামাজিক মর্যাদার সংকটে ভুগছেন তারা। অথচ ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত এইচটি ইমাম কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দিলে এ সংকটের শেষ হতো।

বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, মাত্র দুই মাস হলো এখানে যোগদান করেছি। আসলে পদোন্নতির জন্য পদ সৃষ্টি করা জরুরি। আমরা উপরের দিকে কিছু পদ সৃষ্টির জন্য একাধিকবার সভা করেছি। বেতারের অর্গানোগ্রামে কিছু পদ বাড়ানো হচ্ছে। আশা করছি, আগামী তিন মাসের মধ্যে তা চূড়ান্ত হবে। এতে পদোন্নতির সমস্যা কিছুটা হলেও কমে আসবে।

মুক্তি চান কর্মকর্তারা: পদোন্নতি বৈষম্য থেকে মুক্তি চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আবেদন দিয়েছে বিসিএস তথ্য-সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। বিসিএস তথ্য ক্যাডারের চারটি শাখা অর্থাৎ অনুষ্ঠান, বার্তা, কারিগরি (বা.বে) প্রকৌশল এবং তথ্য (সাধারণ) শাখা রয়েছে। এ চার শাখার পৃথক পদ কাঠামো, নিয়োগবিধি, পদোন্নতি আলাদা এবং পদগুলো পারস্পরিক বদলিযোগ্য নয়। সুতরাং চারটি শাখা থেকে উপসচিব পদে আবেদনের জন্য ১০ জন করে আগ্রহী কর্মকর্তার নাম প্রেরণ যুক্তিসংগত। অর্থাৎ তথ্য (সাধারণ) শাখা থেকে ১০ জন এবং বেতারের তিন শাখা থেকে ১০ জন করে ৩০ জন কর্মকর্তার নাম প্রেরণ যুক্তিযুক্ত।

গত ১০ বছর পদোন্নতিতে বৈষম্যের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠান থেকে মাত্র ছয়জন, বার্তা থেকে আটজন, কারিগরি (বা.বে) প্রকৌশল থেকে ১১ জন এবং তথ্য (সাধারণ) থেকে ২৪ জন উপসচিব হয়েছেন।

ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান শাখায় পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম সংকট রয়েছে। অনুষ্ঠান শাখার বিভিন্ন গ্রেডে কর্মরত ২১০ জনের মধ্যে বিভিন্ন গ্রেডের ১৫৭ জন পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন। কিন্তু শূন্যপদ না থাকায় পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। বিসিএস ১৮তম থেকে ২৭তম ব্যাচের ৮৬ কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য। ষষ্ঠ/পঞ্চম গ্রেড থেকে চতুর্থ/পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির পদ না থাকায় বা যৌক্তিক হারে উপসচিব না করায় নিচের দিকে পদোন্নতির সংকট তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ষষ্ঠ গ্রেডের ৫৭ কর্মকর্তা ১৫ বছর ধরে একই গ্রেডে চাকরি করছেন। তারা পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। তথ্য ক্যাডারের বেতারের তিনটি শাখা থেকে ৩০ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য আবেদনের সুযোগ দিলে নিচের দিকের পদোন্নতি জট কিছুটা কমবে।

উপেক্ষিত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি: ২০১৪ সালে বাংলাদেশ বেতারের ৭৫ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যতদিন ভিন্ন ক্যাডার সৃষ্টি করা না হয়, ততদিন বিসিএস বেতার ক্যাডারের কর্মকর্তাদের উপসচিব ও উপরের পদে তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রবেশ পদের সমানুপাতিক হারে পদোন্নতি দেওয়া হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা উপেক্ষা করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগীরা জানান, বাংলাদেশ বেতার, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং পদ সৃষ্টিকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অবহেলা ও উদাসীনতার কারণেই বেতারের কর্মকর্তারা পদোন্নতি বৈষম্যে আছেন।

পদ না থাকলেও সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি থেকে বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। আধা-সরকারিপত্র (ডিও) দেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। কিন্তু জনপ্রশাসন ও তথ্য মন্ত্রণালয় কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পদোন্নতি দিতে আইনগত কোনো জটিলতাও নেই।

অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, এমনভাবে পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এন্ট্রি পদ নিয়েই চাকরি জীবন শেষ করতে হবে।

অর্গানোগ্রামে পদ বাড়ানোর দাবি: ২০২২ সালের ২ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সভাপতি হাসানুল হক ইনু বেতারের সাংগঠনিক কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য তথ্যমন্ত্রী, সচিব এবং বেতারের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি বলেন, বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে বর্তমানে কর্মরত ৯২ সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান)। এর মধ্যে ৭১ কর্মকর্তা উপপরিচালক পদে এবং ৮৩ জন উপপরিচালকের মধ্যে ৬৪ কর্মকর্তা আঞ্চলিক পরিচালক পদে পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন। একইভাবে আঞ্চলিক পরিচালক ও পরিচালক পদেও পদোন্নতি জট আছে। পদোন্নতি জটের কারণে অনুষ্ঠান বিভাগে কর্মরত ২১০ জনের মধ্যে ১৫৭ জনই পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। তিনি আরও লেখেন, ২৮তম বিসিএস থেকে বেতারের অনুষ্ঠান বিভাগে যোগদানের ১২ বছরেও প্রথম পদোন্নতি পাননি। কিন্তু বর্তমানে কর্মরত ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। পদ সৃজন না করলেও এই কর্মকর্তারা ২০ বছরেও পদোন্নতির সুযোগ পাবেন না। পদোন্নতি জট কাটাতে তথ্য মন্ত্রণালয় ও বেতারের সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেন হাসানুল হক ইনু।

সংসদীয় কমিটির সুপারিশ: গত বছরের ১৭ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় বেতারের ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সভায় বেতারের তৎকালীন মহাপরিচালক নাসরুল্লাহ মো. ইরফান জানান, বার্তা ও প্রকৌশল বিভাগের ৩৩ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ অনুষ্ঠানের ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পাননি।

সভায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সুরাহা করতে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তার বাস্তবায়নের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। তিনি বলেন, বেতারের তিনটি ক্যাডারের মধ্যে অনুষ্ঠান ও বার্তা শাখার কর্মকর্তারা পদোন্নতির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসনকে দুবার লেখা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন বলেছে আপাতত এ বিষয়ে কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী একটি কমিটি করে দিয়েছিলেন। কমিটির প্রধান ছিলেন প্রয়াত এইচটি ইমাম। সেখানে বলা হয়েছিল, সব ক্যাডারে সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে হবে।

সভার সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটিও জনপ্রশাসন মানছে না। এটা খুবই অমানবিক যে, একজন ২০ বছর একই পদে চাকরি করছেন অথচ তার পদোন্নতি হচ্ছে না। তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলে বিষয়টির সুরাহা হতে পারে বলেও মনে করেন ইনু।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

ঘুম থেকে ওঠার পরই সারা শরীরে ব্যথা হয়? ভয়াবহ রোগের লক্ষণ নয় তো

আকিজ গ্রুপে চাকরি, পাবেন গ্র্যাচুইটিও

ট্রাফিক জরিমানার নামে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা, ডিএমপির সতর্কতা

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালেন নদীপাড়ের মানুষ

টিভিতে আজকের যত যত খেলা

সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, ডিমলার বন্যা রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে

৬ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

তিস্তার পানির তোড়ে ভেঙে যেতে পারে ফ্লাইড বাইপাস সড়কটি

১০

বজ্রপাতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যু

১১

দুই বাংলাদেশি যুবককে ফেরত দিল বিএসএফ

১২

বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী জনগণের পাশে রয়েছে : নীরব

১৩

শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা আজ

১৪

ছক্কার ঝড় তুলে ম্যাচসেরা সাইফের মুখে আত্মবিশ্বাসের কথা

১৫

আফগানদের হোয়াইটওয়াশ করে তৃপ্ত জাকের

১৬

আবারও ভারতের কাছে কুপোকাত পাকিস্তান

১৭

সাবেক যুবদল নেতার উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা সংস্কার 

১৮

আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা

১৯

কাশিয়ানীতে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ

২০
X