মাহমুদুল হাসান
প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪০ এএম
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০৮:২০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় ‘পঙ্গু’ পরিবার

অনুদান পেতেও ভোগান্তি
সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় ‘পঙ্গু’ পরিবার

সাফায়েত হোসেন। কাজ করেন এনজিওতে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প শেষে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। ফাঁকা রাস্তায় দ্রুতগতিতে চালাচ্ছিলেন গাড়ি। তখন একটি কুকুর রাস্তা পার হচ্ছিল। হর্ন দেওয়া সত্ত্বেও সরেনি। এতে গাড়িটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান সাফায়েত। দুর্ঘটনায় ডান হাত ও পা ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার পর জরুরি অস্ত্রোপচারসহ এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বেশি।

সাফায়েতের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায়। গত বুধবার স্ক্র্যাচে ভর দিয়ে ফলোআপ করতে এসেছেন জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। তিনি বলেন, বাইক দুর্ঘটনায় ডান হাত ও পা ভেঙে যায়। হাঁটতে পারি না। অফিস করতে পারছি না। ঋণের টাকায় চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, হাঁটতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ততদিন চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে পারব কি না সেটি নিয়ে সন্দিহান।

শুধু সাফায়েত নন প্রতি বছর তাদের মতো বহু মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে, অঙ্গ হারিয়ে জীবিকাহারা হচ্ছেন। তদুপরি চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবার হচ্ছে সর্বস্বান্ত।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত, পঙ্গুত্ববরণ করে জীবিকাহারা ব্যক্তিদের সহায়তায় সরকার বিধিমালা করলেও তাদের স্থায়ী পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়। এককালীন যে আর্থিক অনুদান দেওয়ার কথা, সেটি পেতে গিয়েও অন্তহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কারও কারও ক্ষেত্রে অনেক দেন-দরবারের পর অর্থ মিলছে, অনেকের ক্ষেত্রে সেটিও মিলছে না। তারপরও এ আর্থিক সহায়তা জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট নয়।

সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ আর অঙ্গ হারিয়ে কর্মক্ষমতা হারানো ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে সরকারের তরফে। এ ছাড়া দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কেউ চিকিৎসার পর সুস্থ হলে তাকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। এমন সব বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ জারি করা হয়েছে, যা গত বছরের ডিসেম্বরে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে সরকার। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় আর্থিক এ সহায়তা খুবই অপ্রতুল। এরপরও এ সহায়তা পেতেও ভোগান্তির শেষ নেই। তারা বলছেন, অর্থ সহায়তা প্রাপ্তির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা উচিত।

সড়কে দুর্ঘটনা কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তার ধারণা মেলে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যে। সংগঠনটি বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার মানুষকে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ হাজার ৩৭২ জন। একই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ নিহত ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪৮টি দুর্ঘটনায় ৯১ নিহত, ১৫২ আহত ও ১০৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন।

বিআরটিএ বলছে, ২০২৩ সালে ৫ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৪ জন। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই বছর ৫ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৪৭৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও দু-একটি সংগঠনের তথ্যও এর চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির (বিওএস) মহাসচিব ও নিটোরের অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হলে এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। গাড়ির বৈধ কাগজপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ ও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। এরপরও দুর্ঘটনা ঘটলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তাহলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের নিয়ে সমাজে এখনো অপচিকিৎসা হয়। বাইক দুর্ঘটনায় একজনের হাত কিংবা পা ভেঙে গেলে পরিবার প্রথমে কবিরাজের কাছে যায়। সেখানে অপচিকিৎসায় ভালো না হওয়ায় কয়েকদিন পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কারও রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে ৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্জারি করে জোড়া লাগাতে হয়। অবহেলা ও অসচেতনতায় দীর্ঘ সময়ের পর রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এতে অর্গান ড্যামেজ হয়। দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি পঙ্গুত্ব বরণ করে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ করে থাকে। সমন্বিতভাবে নয় বিচ্ছিন্নভাবে। এখন সময় এসেছে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিতভাবে দুর্ঘটনা রোধে কাজ করতে হবে।

ক্ষতিপূরণ বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মারা গেলে কিংবা আহত হলে সম্প্রতি এককালীন কিছু সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কিছু সহায়তা মেলে। তবে সবাই পাচ্ছে না, পেলেও দীর্ঘসূত্রতা।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, সড়কে আহতদের সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (নিটোর)। ৫০০ শয্যা থেকে নিটোরকে এখন ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে দুর্ঘটনার হারও কিন্তু বেড়েছে। এক ইনস্টিটিউট দিয়ে দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সবার চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। এ সেবার পরিধি জাতীয়ভাবে বাড়াতে হবে। দুর্ঘটনারোধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। তাহলে ক্ষয়ক্ষতির হার কমে আসবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিপজলের শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পালনে নিষেধাজ্ঞা

রাইসিকে কেন ভয় পেতেন ইসরায়েলের নেতারা

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের পাশে ভারত

রাইসির মৃত্যুতে বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি?

রাইসির টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার হলো কোরআনের তিন আয়াত 

রাইসিকে কি হত্যা করা হয়েছে?

ড্রোন ফুটেজে উঠে এলো রাইসির হেলিকপ্টারের করুণ পরিণতির দৃশ্য

রাইসির মৃত্যুতে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্টের আবেগঘন স্ট্যাটাস

ইব্রাহিম রাইসি নিহত, জরুরি বৈঠকে ইরান

বিএনপির ৩ নেতা বহিষ্কার

১০

রাইসির জন্য প্রার্থনায় বসেছিল গোটা দেশ

১১

মেঠোপথে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বুনো ফুল ‘পটপটি’

১২

ব্রাজিলের কোপার স্কোয়াডে নতুন চার মুখ

১৩

রাইসির হেলিকপ্টারের যা ঘটেছিল

১৪

দুপুরের মধ্যে ৮০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

১৫

বিচারক থেকে প্রেসিডেন্ট, কে এই রাইসি

১৬

ইব্রাহিম রাইসি মারা গেছেন

১৭

ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত : রাইসি ছাড়াও যারা মারা গেলেন

১৮

রাঙামাটিতে চলছে ইউপিডিএফের আধাবেলা অবরোধ

১৯

পায়ুপথে ব্রাশ দিয়ে কিশোরকে নির্যাতন করলো বখাটেরা

২০
X