কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০২:৩২ এএম
আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ০৭:১৭ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে ডলারের দাম বাড়ায়

এক লাফে বাড়ল ৭ টাকা
জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে ডলারের দাম বাড়ায়

বাজারভিত্তিক দর নির্ধারণের নামে আবারও ডলারের দরে সীমা বসিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সীমার নাম দেওয়া হয়েছে ক্রলিং পেগ। পাশাপাশি একই দিনে ব্যাংক ঋণে সুদ হার নির্ধারণে স্মার্ট রেট তুলে দিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হলেও ডলারের দরে সীমা থাকায় এর সুফল না আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্টো ডলারের জোগানে বড় রকম প্রভাব পড়তে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানিনির্ভর দেশের এক লাফে ডলারের দর ৭ টাকা বাড়ানো কোনোভাবেই উচিত হয়নি। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এতদিন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত ডলারের দর ছিল ১১০ টাকা। নতুন নিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দর বেঁধে দিয়েছে ১১৭ টাকা। অর্থাৎ এ লাফে ডলারের দাম বেড়েছে ৭ টাকা বা ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর মাধ্যমে ডলারের নতুন দর বৃদ্ধির পদ্ধতি ক্রলিং পেগ ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। একই দিন সংস্থাটি সুদের হার নির্ধারণে স্মার্ট রেট তুলে দিয়ে বাজারভিত্তিক করেছে। পাশাপাশি নীতি সুদহার আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করেছে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এসব সিদ্ধান্তের লক্ষ্য ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতিতে লাগাম টানা। কিন্তু বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক না করে ক্রলিং পেগ ঘোষণা করায় এটি কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকেই ঋণের সুদ ও বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলাম। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদ হারকে বাজারভিত্তিক করেছে। কিন্তু ক্রলিং পেগের নামে ডলারের যে দাম ধরে রাখার ব্যবস্থা করেছে তার কারণে মূল্যস্ফীতি কতটা কম তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এতদিন ডলারে দর ১১০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও ব্যাংকগুলো ১২০-২৩ টাকায় ক্রয় করেছে। এজন্য দেশে ডলারের মজুত বেড়েছে। কিন্তু এখন যদি ১১৬-১৮ টাকায় এটিকে আটকিয়ে রাখা হয় তাহলে নিশ্চিতভাবেই ডলারের মজুতে টান পড়বে। অর্থাৎ কম দরে ডলার কিনতে শুরু করলে বৈধ পথে ডলার আসা কমে যাবে। ডলারের মজুতও কমে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন হওয়ার পাশাপাশি ডলার বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।’

এদিকে ডলারের দর হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তাদের অধিকাংশই বলছেন, ডলারের দাম এক ধাপেই ৭ টাকা বাড়ানোয় দ্রব্যমূল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সভাপতি মাহবুব আলম কালবেলাকে বলেন, ‘ডলারের দর বৃদ্ধির ফলে আমদানি খরচ বাড়বে। তবে রপ্তানিকারকরা উপকৃত হবেন।’

সংগঠনটির সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। অধিকাংশ নিত্যপণ্যই আমাদের আমদানি করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দর বাড়ানো হয়েছে। এতে আমদানি খরচ নিশ্চিতভাবে বাড়বে। আর আমদানি খরচ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’

ভোগ্যপণ্যের প্রধান পাইকারি বাজার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে কেন ডলারে ৭ টাকা করে বৃদ্ধি করেছে, তা বুঝলাম না। আমরা যেহেতু বেশিরভাগ নিত্যপণ্যই আমদানি করি সেহেতু আমদানি পণ্যে নিঃসন্দেহে বাড়বে, যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। আমরা তো বেশি টাকায় পণ্য কিনলে বেশি দামে বিক্রি করব। তবে যারা রপ্তানি করবে তারা হয়তো কিছুটা উপকৃত হবেন।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার বাজারভিত্তিক করায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতিতে কতদিন অটল থাকতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা ৯ শতাংশ সুদ বিবেচনা করে ব্যবসার পরিকল্পনা ঠিক করেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংক সেখান থেকে স্মার্টের নামে সুদের হার ১৪ শতাংশে নিয়ে গেছে। আজ আবার বাজারভিত্তিক করেছে। অর্থাৎ সুদের হার আরও বাড়বে, এটায় কোনো সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে আমরা বলব, বাংলাদেশ ব্যাংক যেন আমাদের জন্য নিরাপদে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নীতি তৈরি করে দেয়। নয়তো আমরা লসে পড়ব। সুদের হার বাড়ার ফলে দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এতে দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।’

সুদের হার লাগামহীনভাবে বাড়বে কি না জানতে চাইলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘দেশের ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদের হার ১২ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় সরকার যদি ব্যাংক থেকে অধিক পরিমাণে ঋণ নেয় তাহলে অবশ্যই সুদের হার বাড়তে শুরু করবে। তবে সরকার যদি না নেয় তাহলে সুদের হারে তেমন পরিবর্তন আসবে না।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাভারে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিএনপির দোয়া

রুমাল পেতে বাসের সিট দখল, সরিয়ে অপরজন বসতেই লঙ্কাকাণ্ড

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আরেক বাংলাদেশি নিহত

কনার রহস্যজনক পোস্ট

অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম শতকের দেখা পেলেন রুট

পটুয়াখালী-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন শহীদুল আলম

আইজিপিকে সরাতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ

‘আলোচিত’ ঢাকা-১০ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী শেখ রবি

বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কেটে বিক্রি, ঝুঁকিতে ৪ গ্রাম

চ্যাম্পিয়ন একাডেমি, ছেলেকে পড়াতে পারেন আবাসিক স্কুলে

১০

জোবাইদা রহমান দেশে আসছেন শুক্রবার

১১

কুকুরছানা হত্যায় গ্রেপ্তার নারীর সঙ্গে কারাগারে ২ বছরের শিশু

১২

যমুনা ও সচিবালয় এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ : ডিএমপি

১৩

ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রবি শঙ্কর কন্যা

১৪

মামদানিকে পাত্তা না দিয়ে নিউইয়র্ক যাবেন নেতানিয়াহু

১৫

মাইকিং করে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের

১৬

বিএনপির আরও ৩৬ প্রার্থীর কে কোন আসনে

১৭

চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব আর দেখতে চাই না : শিবির সভাপতি

১৮

আড়ংয়ে শুরু হচ্ছে ‘উইন্টার ওয়ান্ডারল্যান্ড’, চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত

১৯

আকরামের ঐতিহাসিক রেকর্ড ভাঙলেন স্টার্ক

২০
X