বগুড়ায় জেলখানার ছাদ ফুটো করে চার ফাঁসির আসামির পলায়নের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনার পর পরই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে, কারাগারের নিরাপত্তাসহ পুরো ঘটনা তদন্তে কারা মহাপরিদর্শকের কার্যালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনা খতিয়ে দেখতে বুধবার বগুড়ায় পৌঁছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই আসামির একজন মো. জাকারিয়া বগুড়ার কাহালু পৌরসভার মেয়র আবদুল মান্নানের ছেলে। এক স্কুলছাত্রকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকিরা হলো কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা এলাকার মৃত আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম মজনু ওরফে মঞ্জু (৬০), নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ফজরকান্দি এলাকার মৃত ইসরাফিল খাঁর ছেলে আমির হোসেন ওরফে আমির হামজা (৪১) এবং বগুড়া সদর উপজেলার কুটুরবাড়ী পশ্চিমপাড়া এলাকার ইসরাইল শেখ চান মিয়ার ছেলে ফরিদ শেখ (৩০)।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে তিনি খবর পান জেলা কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি পালিয়েছে। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।
এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। সেখানে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে কারাগারে কনডেম সেলে থাকা চার আসামি ছাদ ফুটো করে বেরিয়ে যায়। এরপর তারা বিছানার চাদর ছিঁড়ে তা দড়ির মতো ব্যবহার করে দেয়াল টপকে বাইরে বের হয়। এর আগেই তারা কয়েদির পোশাক খুলে ফেলে। জেলখানা থেকে বের হয়ে তারা কারাগারের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর সেতু অতিক্রম করে চেলোপাড়া এলাকায় যায়। ভোর রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে সংবাদ পেয়ে পুলিশের একাধিক দল শহরে তল্লাশি শুরু করে। রাত ৪টা ১০ মিনিটে চেলোপাড়া চাষিবাজার থেকে চারজনকেই গ্রেপ্তার করেন বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম।
পুলিশ সুপার বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পর পরই জেলা কারাগার থেকে পাঠানো ছবি দেখে তাদের চিহ্নিত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর ওই চারজনকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর বুধবার সকালে কারা কর্তৃপক্ষ তাদের শনাক্ত করে।
তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তারা চারজন একই সঙ্গে একটি কক্ষে (সেল) অবস্থান করত। সেলটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। এ কারণে ছাদে কোনো রড ছিল না। চুন-সুড়কির কাজ করা ছাদ ফুটো করে তারা বেরিয়ে গেছে। পুলিশ সুপার বলেন, জেল থেকে পালানোর ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই খোরশেদ আলম বলেন, রাতে ঘটনা জানার পর আমরা সব জায়গায় খোঁজ নিতে শুরু করি। এ সময় মনে হয়—আসামিরা নদীর তীর ধরে পালানোর চেষ্টা করবে। তাই চেলোপাড়া সেতুর পূর্ব পাশে চাষিবাজার এলাকার দিকে চারজন কনস্টেবল নিয়ে যাই। সেখানে পৌঁছার পর দেখি চারজন লোক নদীর পাড় থেকে ওপরে উঠছে। তাদের আটক করার পর পরই সদর থানা পুলিশের আরও দল সেখানে পৌঁছে। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি জেলখানা থেকে পাঠানো ছবির সঙ্গে মিলিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, কারাগারের সার্বিক নিরাপত্তা ও কারা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির বিষয় খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসন থেকে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে জেলা পুলিশ, র্যাব, কারাগার, ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর কারা অভ্যন্তরে এবং বাইরের নিরাপত্তা বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কারাগার পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান বলেন, বগুড়ার কারাগারটি অনেক পুরোনো, ১৮৩৩ সালে নির্মিত। ফলে এর যে ছাদ তা পুরোনো, সেখানে তারা ছিদ্র করে বেরিয়ে যায়। পুরো ঘটনাটি তদন্ত করা হবে। কীভাবে তারা সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে গেল। কার কী দায়দায়িত্ব ছিল সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, কারাগার থেকে আসামি পালিয়ে যাওয়ার কারণে এখানে নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে। এখন তদন্ত করে দেখতে হবে দুর্বলতা কোথায় ছিল? তারা পালিয়ে যাওয়ার সময়ের একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে, সেটাকে তদন্তের কাজে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।