ফোকাস ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৪ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বিষাক্ত প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে...

বিষাক্ত প্লাস্টিকের ঝুঁকিতে...

সস্তা, সহজলভ্য এবং বিকল্প হওয়ায় প্রতি বছর প্লাস্টিকের ব্যবহার ১৫ শতাংশ করে বাড়ছে; কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, প্রত্যক্ষভাবে প্লাস্টিক সস্তা বলে মনে হলেও পরোক্ষভাবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্লাস্টিক দূষণের ফলে পুরো পৃথিবীই এক জটিল সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে মানবদেহে বাড়ছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিকজনিত রোগ সংক্রমণ এবং প্লাস্টিক দূষণজনিত মৃত্যুর হার। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক দূষণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসায় প্রতি বছর দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে এ ব্যয় বাড়বে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ১৯৫০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্লাস্টিক উৎপাদন ২০০ গুণ বেড়েছে। ২০৬০ সাল নাগাদ তা আরও তিনগুণ বাড়বে। ল্যানসেটের প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন সম্প্রতি প্লাস্টিক দূষণ রোধে শতাধিক দেশ আলোচনা করেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে সৌদি আরব বাণিজ্যঝুঁকি বিবেচনা করে এ সমঝোতায় রাজি হয়নি।

আধুনিক সময়ে নিত্যদিনের প্রয়োজন বিবেচনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়ানোর সুযোগ একেবারেই নেই; কিন্তু মূল সমস্যা হলো এককালীন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। বর্তমানে সস্তা বিকল্প হিসেবে এককালীন প্লাস্টিক যেমন পানির বোতল, ওয়ান টাইম কাপ কিংবা ওয়ান টাইম প্লেট বা চামচের ব্যবহার বেড়েছে। এসব প্লাস্টিকের অধিকাংশই রিসাইকেল করা সম্ভব হয় না। সচেতনতার অভাবে আতিপাতি ছড়িয়ে পড়ায় তা জলাশয় এমনকি ভূমিদূষণের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষত, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, গোটা বিশ্বে প্রায় ৮ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ রিসাইকেল করা সম্ভব হয়। এসব প্লাস্টিক সমুদ্রের গভীর তলদেশ এমনকি হিমালয় পর্বতেও ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার বছর ধরে সংরক্ষিত এসব প্রাকৃতিক অঞ্চলেও প্লাস্টিক দূষণের নেতিবাচকতা ছড়াচ্ছে। এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা হিমালয়ের মেঘে বিষাক্ত ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে সমুদ্রও। পৃথিবীতে অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান উৎস সমুদ্রের অনেক স্থানে প্লাস্টিক এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে, অক্সিজেন উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ থাকছে না।

ল্যানসেটের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্লাস্টিক দূষণের প্রভাবে জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য যেমন বিপর্যস্ত তেমনি মানবস্বাস্থ্যের জন্যও তা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে যেসব প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয় সেগুলো বায়ুদূষণ ঘটায়। এ ছাড়া এসব প্লাস্টিকের ক্ষয় হয় না বিধায় ক্ষুদ্র কণাগুলো আমাদের শরীরে পানি, বায়ু এমনকি খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্লাস্টিক দূষণের ফলে গোটা বিশ্বেই মশাবাহিত রোগের সংক্রমণ বেড়ে চলেছে। প্লাস্টিকে ছেয়ে থাকা জলাশয়গুলো পরিষ্কার করা কঠিন। তাই দূষিত পানিতে সহজেই মশা বংশবিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া, বন্যা-পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকে বোঝাই জলাশয়গুলোতে অধিকাংশ সময় পানির প্রবাহ সুস্থির থাকে না। তাই দূষিত পানি জমে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রায় ৯৮ শতাংশ প্লাস্টিক উৎপাদনে জীবাশ্ম জ্বালানি, গ্যাস কিংবা কয়লা ব্যবহৃত হয়। ফলে প্লাস্টিক উৎপাদন করতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন টন কার্বনডাই অক্সাইড পরিবেশে নির্গত হচ্ছে। প্লাস্টিক উৎপাদনের পাশাপাশি অনবায়নযোগ্য প্লাস্টিক পুড়িয়ে ফেলা হয়। তাতে বায়ুদূষণ আরও বাড়ে। প্লাস্টিক উৎপাদনে ১৬ হাজারেরও বেশি রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হয়। কিছু কিছু প্লাস্টিক দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে থাকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করলে নারীদের গর্ভপাত, সন্তান জন্মদানে ঝুঁকি, অকালে জন্মদানের মতো জটিল সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর ওপরও তা প্রভাব ফেলতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাবে জন্মগত স্থায়ী শারীরিক ত্রুটি, অসম ফুসফুস এমনকি শিশুদের শরীরে ক্যান্সারের মতো রোগও জন্মাতে পারে। তাদের মতে, প্লাস্টিকে থাকা পিবিডিই, বিপিএ এবং ডিইএইচপি—এই তিনটি উপাদানই অনেক ক্ষতি করে। প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা না করায় তা ক্ষয় হয়। ক্ষয় হয়ে রূপ নেয় অতিক্ষুদ্র কণায়। এসব অতিক্ষুদ্র কণা পানি, বায়ু এমনকি খাদ্যের মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করে। যদিও এখন পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাবে মানব শরীরে কতটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা জানা সম্ভব হয়নি; কিন্তু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন প্লাস্টিক মানবদেহে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজশাহীর চারঘাটে বন্যাদুর্গতদের পাশে বিএনপি

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন রোধে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে : নীরব

মৃত বাবাকে চেয়ারে বসিয়ে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার ভিডিও নিয়ে জানা গেল সত্য ঘটনা

চিকিৎসা সামগ্রী রেজিস্ট্রেশনে স্বতন্ত্র নীতিমালার দাবি

রাতে জামিনে কারামুক্ত হলেন শমী কায়সার

ঢাকায় ‘কমনওয়েলথ অ্যালামনাই প্রদর্শনী ও নেটওয়ার্কিং সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠিত

‘ভোলাগঞ্জ থেকে লুট করা’ পাথর ডেমরায় উদ্ধার

আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হল ঢাবি-সাত কলেজ

রাতে স্মার্টফোনের আসক্তি সহজেই দূর করুন

গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ : আমিনুল

১০

বাড়ির মালিককে থাপ্পড় দিয়ে ডাকাত — ‘ঘরে সিসি ক্যামেরা কেন লাগিয়েছিস’

১১

হাঁসের মাংস থেকে দূরে থাকবেন যারা

১২

ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এসে যুবকের ভিডিও কল, আ.লীগ সন্দেহে গণপিটুনি

১৩

আগস্টের প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার 

১৪

জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা : চট্টগ্রামে যেসব সড়কে চলতে মানা

১৫

টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় কূটনীতি ও সংহতির সমন্বয়ের আহ্বান কফিলউদ্দিনের

১৬

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

১৭

জাহাঙ্গীরনগরে নতুন মোড়কে ফিরছে ‘পোষ্য কোটা’

১৮

‘যারা স্বাধীন দেশ চায়নি, তাদের এখন বড় গলা’

১৯

পাথর লুটের পর ঘুম ভাঙল সবার, এখন পর্যন্ত উদ্ধার কত

২০
X