আমাদের সূর্যের এখন মধ্যবয়স। হলদে ছাপ পড়েছে শরীরে (ইয়েলো ডর্ফ স্টার)। জ্বালানি হাইড্রোজেন যখন ফুরিয়ে যাওয়ার পথে থাকে, তখন দিনে দিনে লাল হতে থাকে সূর্যের মতো অপেক্ষাকৃত কম ভরের তারাগুলো। বড় হতে হতে যখন এটি রেড জায়ান্ট ওরফে লাল দানবে পরিণত হবে তখন শুরু হবে দুটি প্রক্রিয়া।
একদিকে সূর্যের কেন্দ্রটা আকারে ছোট ও উত্তপ্ত হতে থাকবে। অন্যদিকে ক্রমাগত বড় হতে থাকবে বাইরের দিকটা। কতটা বড় হবে? গবেষণায় দেখা গেল এ পর্যায়ে তারকাগুলো তাদের আগের আয়তনের চেয়ে অন্তত একশগুণ তো বড় হবেই। সুতরাং ওই পর্যায়ে সূর্যের ব্যাসার্ধ স্পর্শ করবে মঙ্গল গ্রহকেও। অর্থাৎ, ওই পর্যায়ে বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গলকে টুপটাপ করে গিলে খাবে সূর্যটা।
ঘটবে গ্রহের মৃত্যু; কিন্তু আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সির ৮-আরসা-মাইনরিস-বি নামের গ্রহটার বেলায় সেটা ঘটেনি। নক্ষত্রের করাল গ্রাস থেকে বেঁচে গেছে ওটা। বিজ্ঞানীরাও খুঁজে পেয়েছেন সম্ভাব্য কারণ।
২০১৫ সালে আবিষ্কার করার পরই বিজ্ঞানীরা মাথা চুলকাতে শুরু করেন গ্রহটার অস্তিত্ব নিয়ে। কারণ, সে যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে সেটার ভেতর চলছিল হিলিয়াম বার্নিং প্রসেস। মানে ওই তারকা এরই মধ্যে রেড জায়ান্ট দশা পার হয়ে এসেছে। সূত্রমতে, ওই দশায় থাকা অবস্থায় ৮ আরসা মাইনরিসকে গিলে ফেলার কথা তার।
নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট স্পেস টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানী মার্ক হন হিসাব-নিকাশ করে জানালেন, গ্রহটি এক সময় একটি নয় দুটি নক্ষত্রকে ঘিরে প্রদক্ষিণ করত। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে বাইনারি সিস্টেম।
তবে নক্ষত্র দুটির বয়স এক ছিল না। একটি তারকা যখন রেড জায়ান্ট দশার দিকে যাচ্ছে, অন্যটি তখন বুড়িয়ে যাওয়া সাদা বামুন (হোয়াইট ডর্ফ)। প্রথম তারাটির হাইড্রোজেন নিঃশ্বেস হয়ে এর কেন্দ্রের হিলিয়াম গোলকটি হয়ে পড়েছিল দারুণ উত্তপ্ত।
একপর্যায়ে ওটা সংকুচিত হতে শুরু করে এবং হাতের কাছে থাকা সেই সাদা বামন নক্ষত্রটিকেও নিজের দিকে টানতে থাকে। লাল দৈত্য যখন সাদা বামনকে গিলতে শুরু করল, তখন ঘটল আরেক ঘটনা। থেমে গেল রেড জায়ান্টের বৃদ্ধি। সাদা বামন তারাটিকে গিলতে গিয়েই যেন লাল নক্ষত্রের খিদে কমে গেল। তাতেই বেঁচে গেল ৮-আরসা-মাইনরিস-বি নামের গ্রহটি। দুটি তারা এক হয়ে যাওয়ার পর এবার নতুন গোলককে ঘিরেই সে ঘুরতে লাগল।
মূলত প্ল্যানেটারি সিস্টেম কীভাবে কাজ করে বা তৈরি হয়, সে-সংক্রান্ত গবেষণায় এ আবিষ্কারটি কাজে আসবে। গ্যালাক্সিতে অনেক বাইনারি সিস্টেম আছে, যাকে কেন্দ্র করে অনেক গ্রহ ঘুরছেও। সেই গ্রহ কী করে তৈরি হলো বা তাদের পরিণতি কী, সেটা জানতেও ৮-আরসা-মাইনরিস একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।
অবশ্য এ তত্ত্বের বাইরেও আরেকটি সরল ব্যাখ্যার সম্ভাব্যতা উড়িয়ে দিচ্ছেন না জ্যোতির্বিদরা। বাইনারি সিস্টেমের দুটি নক্ষত্র যখন এক হয়ে যায়, তখন একটা সাংঘর্ষিক দশাও তৈরি হয়। আর এমন মহাজাগতিক সংঘর্ষের পরও তৈরি হতে পারে আস্ত একটা গ্রহ। ঠিক যেভাবে আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে অতিকায় আরেক গ্রহের (যার নাম থিয়া) সংঘর্ষে চাঁদ তৈরি হয়েছিল বলে জোর বিশ্বাস গবেষকদের।
মন্তব্য করুন