আবিদ রাইহান
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ০৮:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রচণ্ড গরমেও কাবা চত্বর শীতল থাকার রহস্য

প্রচণ্ড গরমেও কাবা চত্বর শীতল থাকার রহস্য

বিশ্ব মুসলিমের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মক্কা ও মদিনা। হজের মৌসুম ছাড়াও সারা বছরই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পদচারণে মুখরিত থাকে পবিত্র এ দুই শহর। মরুর দেশ হিসেবে গরমও থাকে অনেক উত্তপ্ত। সৌদি আরবে গ্রীষ্মের সময় মক্কায় ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। মরুর দেশ সৌদি আরবের শুষ্ক তাপমাত্রা এবং প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও পবিত্র কাবা চত্বর শীতল থাকার কারণ হলো এর মেঝেতে বসানো বিশেষ গুণসম্পন্ন পাথর। গ্রিস থেকে আনা এ পাথর ও বিশ্বসেরা আর্কিটেকচারদের বিশেষ পুরকৌশল বিদ্যা কাবা চত্বরকে প্রচণ্ড রোদের মধ্যেও শীতল রাখে বলে জানায় দেশটির পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সি অ্যাফেয়ার্সের অফিস। গ্রিসের থাসোস নামক পাহাড় থেকে এ পাথর আমদানি করা হয়েছে বলে এর নাম ‘থাসোস পাথর’। এই পাথরের বিশেষ গুণ হচ্ছে, তা সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে তাপও শুষে নিতে পারে। এ ছাড়া এই মার্বেল পাথরের নিচে রয়েছে কৃত্রিম পানির নালা, যা বালির মধ্য দিয়ে পানি প্রবাহিত করে নিচে ভিজিয়ে রাখে। যার ফলে সৃষ্টি হয় শীতলতা।

জানা যায়, ১৯৭৮ সালে সৌদি বাদশাহ খালিদের নির্দেশে পবিত্র মসজিদুল হারামের মাতাফ (কাবা চত্বর) সম্প্রসারণকালে প্রথমবার এর মেঝেতে থাসোস মার্বেল লাগানো হয়। পবিত্র মসজিদে ব্যবহৃত মার্বেলের পুরুত্ব পাঁচ সেন্টিমিটার। এর বৈশিষ্ট্য হলো, তা রাতের বেলা ছিদ্রের মাধ্যমে মুহূর্তেই আর্দ্রতা শোষণ করে এবং দিনের বেলা রাতের শোষিত আর্দ্রতা বের করে। তা ছাড়া সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করে দিনের বেলা মেঝের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ফলে তপ্ত রোদের মধ্যেও সবসময় মসজিদের মেঝে শীতল থাকে। বিশ্বের সবচেয়ে দুর্লভ মার্বেলগুলোর একটি থাসোস মার্বেল। গ্রিসে স্ফটিক সাদা রঙের এ পাথরের বহুল ব্যবহার রয়েছে। অ্যামফিপোলিসের প্রাচীন মেসিডোনিয়ান সমাধি, ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়াসহ ইতিহাসের সেরা স্থাপনাগুলোর দেয়াল ও মেঝে এই পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। মহামূল্যবান এই পাথরের দাম প্রতি বর্গমিটার ২৫০ থেকে ৪০০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি। মার্বেলটি এজিয়ান সাগরের কাভালার কাছে পূর্ব গ্রিক দ্বীপ ‘থাসোস’ থেকে সংগ্রহ করা হয়।

মক্কা-মদিনা সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ভার দেওয়া হয়েছিল মিশরীয় স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইলের ওপর। তিনি চেয়েছিলেন, তাওয়াফকারীদের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য মসজিদুল হারামের মেঝে এমন মার্বেল পাথর দিয়ে ঢেকে থাকবে যার বিশেষ তাপ শোষণ ক্ষমতা রয়েছে। অনেক অনুসন্ধানের পর এরকম মার্বেল পাথরের সন্ধান পাওয়া যায় গ্রিসের ছোট্ট একটি পাহাড়ে। আর কোথাও এ ধরনের মার্বেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

স্থপতি কামাল ইসমাইল গ্রিসে গিয়ে পর্যাপ্ত মার্বেল কেনার চুক্তি সই করে মক্কায় ফিরে আসেন। যথাসময়ে সাদা মার্বেলের চালানও চলে আসে এবং সেগুলো দিয়েই বিশেষ নকশায় মসজিদুল হারামের মেঝের কাজ সম্পন্ন হয়। ওই ঘটনার ১৫ বছর পরে সৌদি সরকার কামাল ইসমাইলকে আবারও তলব করে এবং বলা হয়, মদিনার মসজিদে নববির চারপাশের চত্বরও একইভাবে সাদা মার্বেল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল ওই পাথর পাওয়া যাবে কি না, এই সংশয় নিয়ে আবার গ্রিসে গেলেন। গ্রিসের পাথর কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৫ বছর আগেই পাহাড়ের বাকি অংশটুকু বিক্রি হয়ে গেছে। ওই কোম্পানির অফিস থেকে বেরিয়ে আসার আগে বাকি মার্বেল পাথর যিনি কিনেছিলেন, তার নাম-ঠিকানা জানতে চান। জানানো হয়, ১৫ বছর আগের লেনদেন পাওয়া দুষ্কর। তবে পেলে জানাবে বলে কথা দেয়। পরদিন তাকে ফোন দিয়ে জানানো হলো, সেই ক্রেতার নাম-ঠিকানা খুঁজে পাওয়া গেছে। আবারও সেই অফিসের দিকে যাত্রা করেন তিনি। ঠিকানা হাতে পেয়ে তার হার্টবিট বেড়ে যায়। কেননা কাগজের হিসাব অনুযায়ী ওই ক্রেতা একটি সৌদি কোম্পানি।

স্থপতি কামাল ইসমাইল সেদিনই সৌদি আরবে ফিরে যান। ক্রেতা কোম্পানির এমডির সঙ্গে দেখা করে জানতে চাইলেন, ১৫ বছর আগে গ্রিস থেকে কেনা সেই মার্বেল পাথর দিয়ে তারা কী করেছেন। এমডি প্রথমে কিছুই মনে করতে পারলেন না। পরে খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেল সেই সাদা মার্বেলের পুরোটাই স্টকে পড়ে আছে, কোথাও ব্যবহার করা হয়নি।

এ তথ্য পেয়ে কামাল ইসমাইল সেখানেই শিশুর মতো কাঁদতে শুরু করেন। এমডি তার কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে ড. কামাল ওই কোম্পানিকে সৌদি সরকারের পক্ষে একটি খালি (ব্ল্যাঙ্ক) চেক দিয়ে ইচ্ছামতো অঙ্ক বসিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু কোম্পানির মালিক যখন জানলেন, এই সাদা মার্বেল পাথর মসজিদে নববির চত্বরে বসানোর জন্য ব্যবহৃত হবে, তখন তিনি ওই চেক নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, আল্লাহই আমাকে দিয়ে এটা কিনিয়েছিলেন, আবার তিনিই আমাকে এর কথা ভুলিয়ে দিয়েছেন। এই মার্বেল পাথর রাসুল (সা.)-এর মসজিদের উদ্দেশ্যেই এসেছে!

উল্লেখ্য, স্থপতি ড. মোহাম্মাদ কামাল ইসমাইল (১৯০৮-২০০৮) আর্কিটেকচারের ওপর তিনটি ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রথম মিশরীয় প্রকৌশলী। শতবর্ষী এ স্থপতি তার কর্মজীবনের প্রায় পুরোটা সময় মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এর জন্য কোনো ধরনের পারিশ্রমিক তিনি গ্রহণ করেননি। তার প্রশ্ন ছিল, এ দুটি পবিত্র মসজিদের কাজের জন্য পারিশ্রমিক নিলে শেষ বিচারের দিনে আমি কোন মুখে আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াব?

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আফগানদের বিপক্ষে নতুন শুরুর প্রত্যাশায় জাকের

সৌম্যর জায়গায় দলে এলেন সাকিব

বিবাহিত ব্যক্তির নামাজ অবিবাহিত ব্যক্তির চেয়ে কি ৭০ গুণ উত্তম?

এআই চশমা আনল মেটা, ক্যামেরা-ডিসপ্লে কি নেই তাতে!

ট্রফি বিতর্কে এবার ভারতীয় গণমাধ্যমকে আক্রমণ নকভির

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতিকে সতর্ক করল বিএনপি

পূজা বিঘ্ন করতে পাহাড়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

দিনদুপুরে টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনতাই

গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলায় উড়ছে বাংলাদেশের পতাকা

দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আছে বিএনপি : নজরুল ইসলাম আজাদ

১০

রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাঠে নামছে বার্সা-পিএসজি, ফ্রিতে দেখবেন যেভাবে

১১

‘তারেক রহমান যে কোনো সময় দেশে ফিরবেন’

১২

কার মাধ্যমে ফেমাস হয়েছেন, জানালেন অনন্ত জলিল

১৩

নতুন দায়িত্ব পেলেন এনসিপির ১০ কেন্দ্রীয় নেতা

১৪

নিম্নচাপে পরিণত সাগরের লঘুচাপ, কোন সমুদ্রবন্দর থেকে কত দূরে

১৫

সিজারের কাঁচি দিয়ে ৪ জনকে জখম করলেন চিকিৎসক

১৬

চিয়া সিডের তেল মাথায় দিলে কী হয়? জানলে চমকে যাবেন

১৭

রবিনসনের শতকেও লাভ হলো না, মার্শ ঝড়ে অস্ট্রেলিয়ার জয়

১৮

৭০ বছরে বিয়ে করলেন বৃদ্ধ, ‘বাসর রাতে’ মৃত্যু

১৯

অবসর নিয়ে মেসিকে সতর্ক করে দিলেন সাবেক ব্রাজিল তারকা

২০
X